বরিশাল বিভাগের তিন আসনে শক্ত অবস্থানে ইসলামী আন্দোলন

বরিশাল বিভাগের তিন আসনে শক্ত অবস্থানে ইসলামী আন্দোলন

১৩ November ২০২৫ Thursday ৪:৩৫:৩৫ PM

Print this E-mail this


আমাদের বরিশাল ডেস্ক:

বরিশাল বিভাগের তিন আসনে শক্ত অবস্থানে ইসলামী আন্দোলন

বরিশালের ৩টি নির্বাচনি এলাকায় শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা সাবেক দুই সংসদ-সদস্যকে সামনে রেখে তাদের এই অবস্থান। তাদের সঙ্গে আছেন দলের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া), বরিশাল-৫ (সদর) ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা। বিভাগের ২১ নির্বাচনি এলাকার সবকটিতে প্রার্থী দিলেও এ ৩টি আসনে বিএনপির সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়াবে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া): একটিমাত্র উপজেলা মঠবাড়িয়া নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনি এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সাবেক সংসদ-সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। বিএনপি-জাতীয় পার্টি ঘুরে চলতি বছরের আগস্টে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন চারবারের সাবেক এই সংসদ-সদস্য। যে কোনো মূল্যে সংসদ-সদস্য হওয়ার টার্গেটে ফরাজীর এই দলবদল অবশ্য নতুন নয়। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার সংসদ-সদস্য হন জাতীয় পার্টির টিকিটে। সেবার ভোট পান ২৯ হাজার ৮৩৭। পরেরবার ২০০১-এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছেড়ে যোগ দেন বিএনপিতে। ৬৪ হাজার ৯৫৮ ভোট পেয়ে আবার নির্বাচিত হন। ২০০৮-এ তাকে আর মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। সেবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরে যান। ২০১৪ সালে পুনরায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ২৯ হাজার ৩৪২ ভোট পেয়ে যান সংসদে। ২০১৮-এর নির্বাচনে আবার জাতীয় পার্টিতে ফেরেন ফরাজী। লাঙ্গল প্রতীকে ভোট করে নির্বাচিত হন সংসদ-সদস্য। এরপর নামেন আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার চেষ্টায়। জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য হয়েও সংসদে শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বক্তব্য দিতে থাকেন। অবশ্য তাকে দলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিও দেয় মাইনাস করে। ফলে ২০২৪-এর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলেও হেরে যান ফরাজী। এবার তিনি হয়েছেন হাতপাখার প্রার্থী। সকাল-বিকাল পোশাক পালটানোর মতো দল বদলালেও মঠবাড়িয়ায় রুস্তম আলী ফরাজীর রয়েছে ব্যক্তিগত ভোটব্যাংক। বহু বছর বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়ে দরিদ্র একটি শ্রেণির কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। 

বরিশাল-৫ (সদর): বিএনপির ভোটের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের হয়ে ভোটে লড়বেন দলটির নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীম। এই আসনে সিটি ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে বেশ কয়েকবার নিজেদের অবস্থানের জানান দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাতের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েন ফয়জুল। ভোট জালিয়াতির সেই নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকদের যেমন রাখা হয় হামলা-মামলার মুখে, তেমনই বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাননি বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা। ভোটের দিন আওয়ামী লীগের হামলায় গুরুতর আহত পর্যন্ত হন মেয়রপ্রার্থী ফয়জুল। এতকিছুর পরও ওই নির্বাচনে ৩৩ হাজারের বেশি ভোট পান তিনি। এছাড়া ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮’র জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রতিবার গড়ে ৩০ হাজারের বেশি ভোট পায় হাতপাখা। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ ৮ ইসলামী দলের ঐক্য যদি শেষ পর্যন্ত থাকে আর সবাই মিলে ফয়জুল করিমকে একক প্রার্থী দিলে এই আসনেও জিতেও আসতে পারেন ফয়জুল করীম। 

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী): কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমানের রয়েছে এই নির্বাচনি এলাকায় বেশ শক্ত অবস্থান। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচন করেছিলেন তিনি। বিএনপি ছেড়ে হাতপাখায় যাওয়া এই নেতার সবচেয়ে বড় অর্জন ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৩৮ হাজার ৯৮ ভোট পাওয়া। ষড়যন্ত্রসহ নানা কারণে দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে চলতি বছর বিএনপি ছেড়ে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেন মুস্তাফিজুর। এর পরপরই তাকে এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন। নির্বাচনি এলাকার দুই উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিএনপির পাশাপাশি বেশ শক্ত অবস্থান ইসলামী আন্দোলনের এই প্রার্থীর। পেশায় চিকিৎসক মুস্তাফিজ গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়ে সমর্থন পাচ্ছেন বহু সাধারণ মানুষের। তাছাড়া মোশাররফের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও ভেতরে ভেতরে তার সঙ্গে রাখছেন যোগাযোগ। কেবল বিএনপি নয়, দুই উপজেলায় থাকা আওয়ামী লীগের ভোটাররাও ঝুঁকছেন মুস্তাফিজের দিকে।

সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক


শেয়ার করতে ক্লিক করুন:

Explore More Districts