১৮ জানুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার ৮:০৭:০৬ অপরাহ্ন | ![]() ![]() ![]() ![]() |
বরিশালে তীব্র শীতে বাড়ছে শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। এ অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারণে শিশুদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। গত ছয় দিনে ১৮৩ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৬৯ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। এই ছয় দিনে মারা গেছে পাঁচ শিশু। তারা জ্বর ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল বলে নিশ্চিত করেছে হাসপতাল কর্তৃপক্ষ।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ রুনা আক্তার জানান, ১২ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়েছিল, এর মধ্যে ১ জন মারা যায়। ১৩ জানুয়ারি ভর্তি হয় ৩০ শিশু, মারা যায় ১ শিশু। ১৪ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়, মারা গেছে ১ শিশু। ১৫ জানুয়ারি ৩০ শিশু ভর্তি হয়। ১৬ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়, মারা যায় ১ শিশু। ১৭ জানুয়ারি ভর্তি হয় ৩০ শিশু, মারা যায় ১ শিশু।
শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার সাহা বলেন, ‘হাসপাতালের দোতলার শিশু ওয়ার্ডে গত ১২ দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ৩০ শিশু ভর্তি হচ্ছে। তিনি বলেন, শিশুর যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয় অথবা যদি ভালো খেতে না পারে, তাহলে শিশুকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আনতে হবে।’
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে তিন গুণের বেশি। অর্থাৎ দেড় শতাধিক। ওয়ার্ড ছাড়াও বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে ৪০০ শতাধিক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক রোগী।শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ রুনা আক্তার বলেন, ‘সোমবার রাতের হিসাব অনুযায়ী এই ওয়ার্ডে ৯২ রোগী ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে রোগী ছিল দেড় শতাধিক। ফলে বেশিরভাগ শিশুকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১২ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়েছিল, এর মধ্যে একজন মারা যায়। ১৩ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিল ৩০ শিশু, মারা যায় এক শিশু। ১৪ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়েছিল, মারা গিয়েছিল এক শিশু। ১৫ জানুয়ারি ৩০ শিশু ভর্তি হয়েছিল। ১৬ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়েছিল, মারা গিয়েছিল এক শিশু। ১৭ জানুয়ারি ৩০ শিশু ভর্তি হয়, মারা গেছে এক শিশু। বাকিদের অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। সবমিলিয়ে চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এ সময়ে মারা গেছে সাত শিশু।
বুধবার বিকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ও শিশুসহ সব ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। শয্যা না পেয়ে অধিকাংশ রোগী মেঝেতে আছে। এ সময়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীদের ভিড় দেখা যায়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি। জ্বর-সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অনেকে।
হাসপাতালের মেঝেতে শয্যা করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তিন বছরের মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন বরিশাল কলেজ এভিনিউর বাসিন্দা জেসমিন বেগম। তিনি বলেন, ‘চার দিন ধরে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে আছি। কোনও শয্যা খালি নেই। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছে। মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। কিন্তু এখানে না রেখে উপায় নেই। আরও শয্যা বাড়ানোর দাবি জানাই।’
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগীকে সেবা দিচ্ছেন চার শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে তিন গুণের বেশি। শিশু ওয়ার্ডে শয্যা কমসহ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি।’
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে বিভাগজুড়ে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেশি ভোলায়। গত মাসে বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছিলেন তিন হাজার ৬২৭ জন। এর মধ্যে ওই মাসের শেষের সাত দিনে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ১৫৩ জন। চলতি মাসের ১৭ দিনে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে চার হাজারের বেশি রোগী বিভাগের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েছেন।
শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ: এই শীতে শিশু ও বয়স্কদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মনিরুজ্জামান শাহিন। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে যে কেউ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এসব রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার, যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে রাখা, সেইসঙ্গে ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে শিশুদের ঘর থেকে কম বের করতে হবে। ঘরের মধ্যে ঠান্ডা বাতাস যেন না ঢোকে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।’
শীত মৌসুমের শুরু থেকে ঠান্ডাজনিত রোগী বেড়েছে উল্লেখ করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তারা। শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল। এজন্য অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আমরা শিশু বিভাগে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |