২৮ September ২০২৫ Sunday ৫:০৭:২৮ PM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
বিশেষ প্রতিনিধি:

বরিশালের ২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে এক সময়কার তরুণ নেতা গোলাম ফারুক অভি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার একটি জোরালো গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মডেল ও অভিনয়শিল্পী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সাবেক এই সাংসদ ২০০২ সালের শেষের দেশত্যাগ করেছিলেন। তারপরে দীর্ঘ বছর ধরে তিনি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে আছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আলোচিত হত্যা মামলাটি থেকে খালাস পেয়েছে তিনি।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, তৎসময়ের জনপ্রিয় এমপি অভির দেশে ফিরে নিজ এলাকা উজিরপুর-বানারীপাড়া থেকে সাংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। এনিয়ে এখন পর্যন্ত তার কোনো মন্তব্য না পাওয়া গেলেও বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশেষ করে ভোটারদের মুখে মুখে অভির দেশে ফেরা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে।
বরিশাল ২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন সরফুদ্দিন সান্টু, দুলাল হোসেন, রওনাকুল ইসলাম টিপু এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েল। পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীতার ঘোষণা দিয়ে মাঠে আছেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাস্টার আব্দুল মান্নান এবং ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দীন। নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভব্য প্রার্থীদের তৎপরতার মধ্যে হঠাৎই আলোচনায় আসলেন কানাডায় অবস্থানরত সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি।
বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গোলাম ফারুক অভি বিএনপির ছাত্রসংগঠনের নেতা হলেও তিনি ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন। এবং সংসদীয় এলাকার উন্নয়নে তিনি ব্যাপক কাজ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ২০০২ সালের শেষের দিকে মডেল ও অভিনয়শিল্পী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যাকাণ্ডে আলোচিত এই নেতার নামটি জড়িয়ে যায়। তৎকালীন সময়ে পুলিশ এই হত্যা মামলায় একমাত্র অভিকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেন।
সূত্রগুলো জানায়, আলোচিত এই মামলাটির কারণে সাবেক এমপি অভির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দুর্বিসহ ওঠে এবং তার করান্তরীণ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসে। তখন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ২০০৭ সালে ও ২০১৮ সালে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে লাল নোটিস জারি করে। তবে অভি শুরু থেকেই মডেল তিন্নির প্রাণবিয়োগের ঘটনাটিকে আত্মহত্যা দাবি করে আসছিলেন এবং আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে লড়াইও করছিলেন।
সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশে অভির এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় ৫ বছর স্থগিত থাকার পরে ২০১৫ সালে মামলাটির বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। ২০১৯ সালের ১৯ অগাস্ট মামলাটি রায়ের জন্য ধার্য ছিল। রায়ের তারিখ ৪১ বার পরিবর্তন করার পর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য পুনরায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২০২২ সালে মামলাটির সাক্ষ্য পর্ব আবার নতুন করে শুরু হয়। ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোছা: শাহীনুর আক্তার এই মামলা থেকে গোলাম ফারুক অভিকে খালাস দেন।
হত্যা মামলায় আদালত থেকে রেহাই পাওয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার-প্রকাশ হলেও সাবেক এই এমপিকে কোনোর রূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। এবং তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তাও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইতিমধ্যে উজিরপুর-বানারীপাড়ার মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে অভি দেশে ফিরছেন এবং নির্বাচনে অংশ নিবেন।
স্থানীয় অনেকে বলছেন, গোলাম ফারুক অভি দীর্ঘ দুই যুগ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। তিন্নি হত্যা মামলায় তিনি খালাসপ্রাপ্ত হওয়ার পরে এলাকায় অনেকের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এবং ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশ নিতেও তার আগ্রহের কথা শোনা যাচ্ছে। জনপ্রিয় এই নেতৃত্ব যদি স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রার্থী হন তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিদের ঘাম ঝরতে পারে।
নিশ্চিত হওয়া গেছে, আলোচিত মামলা থেকে অভির দেশে ফেরা এবং উজিরপুর-বানারীপাড়া আসনে তার নির্বাচন অংশ নেওয়ার গুঞ্জনে স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন। তাদের নেতার সিদ্ধান্ত আসা মাত্রই মাঠে নেমে পড়তে পারেন।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, জনপ্রিয় অভি ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশ নিলে অনেক হিসেব পাল্টে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার বিষয়টি অনেকের কাছে চিন্তার হতে পারে। তবে অভি আদৌ দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেবেন কী না সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই রাজনৈতিক কি সিদ্ধান্ত নেন সেটাই এখন দেখতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |