আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর
‘তাহিরপুরে বন্যা ও ঈদের ছুটির পর ১৭ জুলাই রবিবার উপজেলার বালিজুরি নয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে। এ বিদ্যালয়ে সর্বমোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৭২ জন। এর মধ্যে রবিবারে উপস্থিত প্রায় ১০০ জন। ছাত্রছাত্রীরা বলে, স্যার আমাদের বই দেন। বন্যায় আমাদের সকল বই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।’ কথাগুলো বলছিলেন, তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি ইউনিয়নের বালিজুরি নয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক।
এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী দিনা আক্তার জানায়, বন্যায় তার সকল বইপুস্তক ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সোহান মিয়া জানায়, খালি হাতে স্কুলে আইছি। স্যারকে বলছি আমাকে নতুন বই দেয়ার জন্য।
তাহিরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিরা রানী জোয়ারদার বলেন, তার বিদ্যালয়ে ৪৯০ জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। রবিবার বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিন ছিল। প্রথমদিন উপস্থিতির সংখ্যাও কম ছিল। তবে উপস্থিতির অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানিয়েছে, তাদের বই বন্যার পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মনিকা মন্ডল জানায়, বন্যার পানিতে তার সকল বইপুস্তক পানিতে ভাসাইয়া নিয়া গেছে।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের পাতারগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় বলেন, বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিন উপস্থিতি কম ছিল। যারা উপস্থিত ছিল তারা অনেকেই বইপুস্তক ছাড়া স্কুলে এসেছে। পাতারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমাইয়া বেগম জানায়, বানের পানিতে তাহার বইপুস্তক ভাসাইয়া নিয়া গেছে।
উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়া হাওরপাড়ের বিদ্যালয় মন্দিয়াতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সান্জু মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রই রবিবার বই ছাড়া বিদ্যালয়ে এসেছে। তাদের অধিকাংশই নতুন বই পাওয়ার জন্য আমাকে বলেছে। কিছু বই ছিল তাদের দিয়েছি। বাকীদের বলে দিয়েছি উপজেলাতে বইয়ের চাহিদা পাঠিয়েছি আসলে সবাইকে দেয়া হবে।
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ভাটি তাহিরপুর গ্রামের মনিরাজ শাহ জানায়, বন্যায় তাহার এসএসসি ও এইচএসসির সকল সার্টিফিকেট, সকল পাঠ্যপুস্তক ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এ ক্ষতি তাহার দ্বারা মেটানো সম্ভব হবে না বলে জানান।
তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ইতি মনি জানায়, এবারের ভয়াবহ বন্যায় তাহার স্কুল ড্রেস ও বইপুস্তক সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
এ ধরনের ঘটনার উপজেলার ১৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি মাদ্রাসা ও দুটি কলেজের।
তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলিম মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান বলেন, মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত অনেক ছাত্রছাত্রী জানিয়েছে তাদের বই বন্যার পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে নতুন বইয়ের চাহিদা পাঠিয়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, উপজেলার ১৩৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকগণ তাকে জানিয়েছেন, তাদের ছাত্রছাত্রীদের বই ও স্কুল ড্রেস বন্যার পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ২৫ শতাংশ বইয়ের চাহিদা পাঠিয়েছেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমাকান্ত দেবনাথ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলিম মাদ্রাসা, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বাদাঘাট দাখিল মাদ্রাসার নতুন বইয়ের চাহিদাপত্র অফিসে এসে জমা হয়েছে। বাকিরাও পাঠবে বলে তাকে ফোনে জানিয়েছেন।
