বন্দরে বায়ূ দূষণকারী ব্যাটারী কারখানা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা সংঘর্ষে আহত ৪০

বন্দরে বায়ূ দূষণকারী ব্যাটারী কারখানা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা সংঘর্ষে আহত ৪০

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের লক্ষণখোলা এলাকার ডংজিং লংজিভিটি নামে একটি ব্যাটারি কারখানা থেকে নির্গত এসিড মিশ্রিত তরল বর্জ্য, সিসাযুক্ত ছাই ও ধোঁয়া দুর্বিষহ করে তুলেছে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ তিন গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জীবন। কারখানাটি বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার ৫ ঘন্টা মদনপুর- মদনগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও কারখানার সামনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র জনতা। এ সময় সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনজন চায়না নাগরিক, ৩০ শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন । আহতরা হলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিহান, জুনায়েদ, জুবায়ের, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তানভির,মিনহাজ, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আরিফ, সিয়াম, রায়হান, নবম শ্রেণির ছাত্র নাইম, সাফায়াত, আরাফাত, নিরব, দশম শ্রেণির ছাত্র রাকিব, শুভ, রাজন, সুপ্ত, , মাসাদ, রাজ, রিহান, সিয়াম, জুনায়েদ, মারুফ, পিয়াস, সিহাব, নাহারিয়ান। এ ছাড়া আহত তিন চায়না নাগরিক ও এলাকাবাসীর নাম পাওয়া যায়নি। পরে সেনাবাহিনী পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানান, প্রায় এক দশক আগে বন্দরের লক্ষণখোলা ও পাতাকাটা আবাসিক এলাকায় আলহাজ্ব ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ও দারুসসালাম হাফিজিয়া এতিম খানার কোল ঘেষে কৃষি জমির উপর ডংজিং লংজিভিটি লিমিটেড নামে একটি চীনা ব্যাটারি কারখানা গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কারখানার আশপাশের এলাকায় সব সময় বাতাসে ছাই উড়ে। ক্লাশ চলাকালীন সময় যখন বর্জ্য অপসারণ হতে থাকে তখন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ক্লাসেই অনেক শিক্ষার্থী বমি করেন। চোখের অসুখ, হাপানী ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ বালাইয়ের আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই ।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ব্যাটারী কারকাখানা নির্গত বর্জ্যে বিদ্যালয়সহ পুরো এলাকা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অনবরত বমি করতে থাকে । পরে দুপুর ১২টা দিকে বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা কারখানার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তাদের সঙ্গে এলাকাবাসী ও যোগ দেন। পরে কারখানার ভিতর থেকে কয়েকজন চায়না নাগরিক শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা কারখানার গেইট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ভাংচুর চালায়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিন চায়না নাগরিক ও ৩০জন শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ৪০ জর আহত হন। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এ মোহাইমিন আল জিহান , সেনাবাহিনীর মেজর আশরাফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন, বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় তারা বলেন, দূষণের কবল থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কারখানা লোকালয়ে থাকতে পারবেনা। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারের উচ্চ পযায়ে আলোচনা করে আগামী কালের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তারা ছাত্র জনতাকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানান।

Explore More Districts