মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অপহরণের পর এক কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে থানায় মামলা হয়েছে।
শনিবার (১০ জুন) ওই কিশোরী বাদী হয়ে দুজনের এই মামলা করেছেন।
মামলায় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনের ছেলে জামিল আহমদকে (২১) প্রধান আসামি এবং একই ইউনিয়নের তেরা মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিনকে (৩৫) দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মামলার পর পরই পুলিশ শনিবার (১০ জুন) দুপুরে প্রধান আসামি জামিল আহমদকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
এরআগে ন্যায় বিচারের আশায় থানা পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন কিশোরী ও তার পরিবার।
এনিয়ে গতকাল শুক্রবার (০৯ জুন) সিলেটটুডেসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
এরপরই ওই কিশোরীকে ডেকে শনিবার মামলা গ্রহণ করে বড়লেখা থানা পুলিশ। মামলার পরই অভিযান চালিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণের মূল হোতা জামিলকে গ্রেপ্তার করে।
বিয়ের আশ্বাসে কিশোরীকে ধর্ষকের বাড়ি পাঠানোর ঘটনা জানাজানি হলে শুক্রবার দিবাগত রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান।
শনিবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) দীপংকর ঘোষ শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ভুক্তভোগী কিশোরী, তার মা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন। কিশোরীর পরিবারকে আইনগত সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং থানার ওসি। পাশাপাশি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এরপর অভিয়ান চালিয়ে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ জামিলকে গ্রেপ্তার করেছে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ করে জামিল। ফাঁড়িতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। ফাঁড়ির (তদন্ত কেন্দ্র) তাজুল স্যার ও রবিউল স্যার আমার মেয়ের ঘটনাটি আপোষ করার নামে তামাশা করেছেন। তবে কুলাউড়ার সার্কেল স্যার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) আর বড়লেখা থানার ওসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। আমার মেয়ের ঘটনাটি তারা জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। এখন আশা করছি ন্যায় বিচারটা পাব।’
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ‘কিশোরী শনিবার বড়লেখা থানায় অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলমান আছে। কিশোরীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।’
কিশোরীর পরিবার শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ও এএসআইয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিনিয়র স্যারেরা বিষয়টি অবগত হয়েছেন। তারা ব্যবস্থা নেবেন।’
জানা গেছে, গত ৭ মে ওই কিশোরীকে অ প হ র ণ করে একাধিকবার ধর্ষণ করেন প্রতিবেশী যুবক জামিল আহমদ। এরপর ওই কিশোরীর মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ মে কিশোরীকে উদ্ধার এবং জামিলকে আটক করেন শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই তাজুল ইসলাম।
অভিযোগ উঠেছে, কিশোরীকে উদ্ধারের পর ১৪ মে রাতে ঘটনাটি নিষ্পত্তির নামে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক ও এএসআই তাজুল ইসলাম রহস্যজনক কারণে ধ র্ষ কে র বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো বৈঠক করে কিশোরীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এসময় বিয়েতে আপত্তি দেওয়ায় কিশোরীর মাকে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউপি সদস্য মখসুদ আহমদ রানা ও নারী ইউপি সদস্য নাসিমা বেগম। পরে ওই কিশোরীকে পুলিশ ধর্ষকের বাড়িতে পাঠায়। সেখানে বিয়ের পরিবর্তে উল্টো নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ১৫ মে ওই কিশোরী তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। এই সুযোগে ওই যুবক অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন। এ অবস্থায় কিশোরীর পরিবার পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে আদালতে মামলা করতে যান। সেখানে আইনজীবী সহকারী প্রভাবিত হয়ে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলার পরিবর্তনে যৌতুকের মামলা লিখে দেন। লেখাপড়া না জানা কিশোরী না বুঝে এতে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে গত ২৯ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার কিশোরী মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিশোরী মা জানিয়েছেন, বর্তমানে তার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে।
এই ঘটনাটি জানাজানির পর এলাকায় তোলপাড় চলছে। স্থানীয়রা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত যুবকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা কিশোরীর সঙ্গে তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন