মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বিভিন্ন চা বাগানে মৌসুমের প্রথম চা পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। এতে খুশিতে চা বাগান মালিক ও শ্রমিকসহ চা সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে দু’তিনটি বাগানে আনুষ্ঠানিকভাবে চা পাতা চয়ন শুরু হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই সবকটি চা-বাগানে পুরোদমে চা পাতা চয়ন শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের চায়ের কথা স্মরন হলেই প্রথমে মৌলভীবাজারের কথা মনে পড়বে। দেশের সবচেয়ে বেশী চা বাগান রয়েছে এ জেলায়। আর জেলার বড়লেখায় রয়েছে প্রায় ১৬ টি চা বাগান। বর্তমানে এখানকার চা বাগানজুড়ে এখন কচি সবুজ রঙের ছোঁয়া। পাতায় পাতায় সবুজ সদ্য অঙ্কুরিত। প্রতিটি টিলা-সমতল প্রান্তরে সবুজের সমারোহ। সেই সতেজ আর স্নিগ্ধ রূপ নিয়ে দু’টি পাতা একটি কুঁড়িরা এখন বাগানে বাগানে মাথা তুলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে।
বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে উপজেলার নিউ সমনবাগ ও পাথারিয়া চা-বাগানে আনুষ্ঠানিকভাবে চা পাতা চয়ন শুরু হয়।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, বাংলাদেশ চা বোর্ড পরিচালিত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ১৬ টি চা বাগানের মধ্যে বৃহৎ দুটি চা বাগান নিউ সমনবাগ ও পাথরিয়া চা বাগানে নতুন চা পাতা চয়নে আনন্দে আত্মহারা চা শ্রমিকরা। কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা গেলো সেই কুঁড়িদের দিগন্তবিস্তৃত। ঘনসবুজ পাতাগুলো গভীর সৌন্দর্যে রাঙা হয়ে আছে। চা বাগানে এখন সবুজ জেগে উঠেছে। দেখে মনে হয় যেনো সবুজ প্রলেপ বিছানো হয়েছে।
চা বাগানগুলোতে শুরু হয়েছে চা উত্তোলন ও (ট্রিপিং) চা গাছে প্রুনিং করার ফলে তিন থেকে চার মাস বন্ধ ছিল চা উত্তোলন। চা গাছে পুনিং শেষে আবার নতুন কুড়ি এসেছে চা গাছে। এতে চা বাগান নতুনরূপে সজ্জিত হয়েছে।
এর আগে পূজা আর্চনা ও মোনাজাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে চা পাতা উত্তোলনের উদ্বোধন করেন নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ শাহিদ নেওয়াজ এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক রাজ নারায়ণ পাল, চা ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক এমদাদুল হক ও চা শ্রমিকসহ মসজিদের ইমাম ও পুরোহিত।
গেলো কয়েকদিন আগে বৃষ্টির দখলে পড়ে স্বস্তি ফিরে পায় চা গাছগুলো। সেই বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় উর্বর হয় প্রকৃতি। সেই উর্বরতার দিগন্তবিস্তৃত উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে হাসতে থাকে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দল। চা বাগানের পথ ধরে এগোলোই এখন চোখে পড়ে ঘনসবুজের ছড়াছড়ি। পাহাড়ি টিলার ধুসর মাটির বুক থেকে সেই সবুজেরা যেন আজ সদলবলে প্রস্ফুটিত।
নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শাহিদ নেওয়াজ বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই আগাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং চা গাছে নতুন কুঁড়ি চলে আসায় বেশ কিছু বাগানে ট্রিপিং শুরু হয়ে গেছে। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চা মৌসুম শেষ হয়ে যায়। তখন চা গাছে প্রুনিং করা হয়। এসময় দুই থেকে তিন মাস চা ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকে। মার্চ-এপ্রিলে বৃষ্টি হলে আবার চা শিল্পে আসে প্রাণচাঞ্চল্য। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এবং শ্রমিকদের আন্তরিকতায় এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা চা উৎপাদন সম্ভব হবে। আমাদের বাগানে সব সময়’ই কোয়ালিটি চা উৎপাদন করে থাকি। এবছরও এর ব্যতিক্রম হবে না ইনশাআল্লাহ।
পাথারিয়া চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল নোনান বলেন, বাগানে দোয়া মাহফিল এবং চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে গীতাপাঠসহ পূজা-অর্চনার মাধ্যমে অধীর আগ্রহে এবং পরম আনন্দে চায়ের কচি পাতা দু-হাত ভরে উত্তোলন করছেন চা শ্রমিকরা
যদিও বৃষ্টির কারণে এবার নতুন পাতা উত্তোলন কিছুটা দেরি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাঘাত ঘটবে না। কারণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছু কিছু সেকশনে সেচ দেওয়া হচ্ছে। আশাকরি কয়েক দিনের মধ্যেই বৃষ্টিপাত হবে, তখন সবুজে সবুজে ভরে যাবে চা বাগানের সবুজ কুঁড়ি।
চা বাগানের অজিত দাস বলেন, প্রায় দু’মাস আগে কাটা হয়েছে গাছগুলো। কয়েকদিন আগের বৃষ্টি পেয়ে এখন চা গাছগুলোতে নতুন কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। যে চা গাছের কুঁড়িগুলো অন্যগুলোর থেকে বেশি বড় হয়ে গেছে সেগুলোকে ইতোমধ্যে তোলা হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, চা বাগানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে চা গাছগুলোর মাথা নির্দিষ্ট মাপ অনুসারে ছেঁটে ফেলা হয়। এ সময় বাগানে চা পাতা উৎপাদন বন্ধ থাকে। তবে চা গাছের পরিচর্যায় ব্যস্থ থাকেন শ্রমিকরা। টানা তিন মাস ধরে অপেক্ষা শেষে চা পাতা উত্তোলন শুরু করা হয় সাধারনত মার্চ মার্সের শুরু থেকে। এবার বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে পাতা চয়ন করতে। তবে অনেক বাগানে সেচের মাধ্যমে চা গাছে নতুন কুঁড়ি গজিয়েছে। এতে অনেক চা বাগানে এখন চোখ জুড়ানো সবুজ আর সবুজ কচি পাতার হাতছানি। তবে বৃষ্টিপাতের পর বদলে যাবে চা বাগানের পরিবেশ ও প্রকৃতি। তৃপ্তির হাসি ফুটবে তখন চা শ্রমিকদের চোখে মুখে।