বজ্রযোগিনী ইউপি উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আজ শেষদিন

বজ্রযোগিনী ইউপি উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আজ শেষদিন

মোহাম্মদ সেলিম
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ইতিহাসখ্যাত পন্ডিত অতীশ দীপংকরের জন্মভূমি বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে তফসীল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের আজ মঙ্গলবার শেষদিন। এখানে উপ-নির্বাচনে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদে ২৭ জুলাই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এখানে উপ-নির্বাচন হলেও কেউ উপ-নির্বাচনের আচরণবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বজ্রযোগিনীর সর্বত্র শোভা পাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের রঙ্গীন বড় বড় ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। এগুলো বাজার ও রাস্তার আশপাশে দেখা যাচ্ছে এখনো। এখানে সবচেয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার রয়েছে মোঃ সিরাজুল ইসলামের। তিনি এখন পর্যন্ত শীর্ষে অবস্থান করছেন এইখাতে। নির্বাচন তফসীল ঘোষণার পরপরই এগুলো সরিয়ে ফেলার কথা ছিল। কিন্তু এখানে তা দেখা যাচ্ছে না।

এখানে উপ-নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী উত্তাপ তেমনটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এখানকার ভোটাররা মনে করছেন, প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষে যারা শেষ অব্দি নির্বাচনের লড়াইয়ে থেকে যাবেন, তখন হয়তোবা এখানকার উপ-নির্বাচন জমে উঠতে পারে। এর আগে এখানে তেমনটা নাও হতে পারে।

এদিকে গত বছরের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে এখানে বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ তোতা মিয়া মুন্সী নৌকার প্রার্থী হাজী রবিন হোসেনকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। মোঃ তোতা মিয়া মুন্সী বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে টানা পাঁচ পাঁচবার বিরতীহীনভাবে এখানে জয়লাভ করেন। সেই হিসেবে এখানে বিএনপির প্রচুর পরিমাণে ভোট ব্যাংক রয়েছে।

বিগত দিনে মোঃ তোতা মিয়া মুন্সীর কাছে এখানে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোনভাবেই দাঁড়াতে পারেনি। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুর রহমান ও ছাত্রদলের নেতা মোঃ মিজানুর রহমানের বাড়ি হচ্ছে এই বজ্রযোগিনীতে। এখানে বিএনপির ভোট ব্যাংকসহ শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে।

অন্যদিকে ৫ বারের চেয়ারম্যান তোতা মিয়া মুন্সী শারীরিক অসুস্থ্যতায় গত ৫ মে মারা যান। এ কারণে এখানে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

জানা যায়, বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার কিছু দিন আগ থেকে ঢাকার বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজ পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকে। গত নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম রবিন হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। রবিন হোসেনের নির্বাচনী ব্যয়ের বড় ধরণের ডোনার ছিলেন এই সিরাজুল ইসলাম। হঠাৎ রবিনকে ছেড়ে সিরাজুল ইসলাম নিজেই প্রার্থী তাতে অনেকেই এখানে অবাক হয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রয়াত তোতা মিয়া মুন্সীর সময়ে এখানকার বিচার আচারে কোনদিন পাশের ইউনিয়ন ক্ষমতার প্রভাবখাটাতে পারেনি বলে জানা গেছে। কিন্তু তার মৃত্যুর কিছুদিন পর রামশিং এলাকায় বিচার সালিশ হয়। তখন সিরাজুল ইসলামসহ পাশের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই আলোচনা হয় উপ-নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম যেন চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। এরপর থেকে এখানে নির্বাচনী হাওয়া দিনে দিনে বদলাতে থাকে। বজ্রযোগিনীতে বিচার সালিশে প্রভাব বিস্তারে একটি পক্ষ নেপথ্যে সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে রবিন হোসেনের সমর্থকদের দাবি হচ্ছে যে, সিরাজুল ইসলাম এই নির্বাচন অংশ নিলে রবিন হোসেন কোনভাবেই জয়লাল করতে পারবে না সিরাজুল ইসলামের কারণে। তাই অনেকের ধারণা এই নির্বাচনে রবিন হোসেন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম এর জন্য।

বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের বিএনপির দাবি হচ্ছে যে, ফল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বিএনপির একজন সমর্থক। তিনি বিগত দিনে বিএনপিকে অর্থবিত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অথচ এই নির্বাচনে বিএনপির সমর্থক হওয়া সত্বেও আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আর আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেতে ফল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।এ নির্বাচনে প্রয়াত তোতা মিয়া মুন্সীর ছেলে মোঃ শাহীন মুন্সী বাবার ইমেজকে পুঁজি করে নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে।

Explore More Districts