ফের প্রাণ ফিরছে সাদাপাথরে, পর্যটকদের ভিড়

ফের প্রাণ ফিরছে সাদাপাথরে, পর্যটকদের ভিড়

ফের প্রাণ ফিরছে সাদাপাথরে, পর্যটকদের ভিড়সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। একসময় যার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠত স্বচ্ছ নদীর পানি, পাথর আর পাহাড়ে ঘেরা অনিন্দ্যসুন্দর এক প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু কয়েকশ’ কোটি টাকার পাথর লুটে তার সৌন্দর্য্য যেন মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে যায়। স্থানীয়দের ক্ষোভ, প্রকৃতিপ্রেমীদের হতাশা আর পর্যটন শিল্পের প্রতি আস্থাহীনতা—সব মিলিয়ে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েছিল সাদাপাথর।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে যৌথ বাহিনী পরিচালিত অভিযানে উদ্ধার হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ ঘনফুট পাথর, যা আবার ধলাই নদীতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘোষণা এসেছে—এবার সাদাপাথর থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। প্রশাসনের এই তৎপরতা পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ভরসা ফিরিয়ে দিচ্ছে।

সাম্প্রতিক দিনে সাদাপাথরে ভিড় জমাচ্ছেন শত শত পর্যটক। কেউ নৌকা ভ্রমণে মগ্ন, কেউ স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটছেন, কেউবা ছবি তুলতে ব্যস্ত। নতুন পর্যটকেরা প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হচ্ছেন, যদিও আগের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করা দর্শনার্থীদের চোখে-মুখে আছে হাহাকার। তবুও এই ফিরে আসা পর্যটকরা স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করছে। নৌকা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যটনসেবা নির্ভর অনেক পরিবার আবারও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে।

সিলেটের অর্থনীতিতে চা, হাওর আর প্রবাসী আয় যেমন বড় ভূমিকা রাখে, তেমনি পর্যটন শিল্পও একটি সম্ভাবনাময় খাত। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় জাফলং, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি বা রাতারগুলের মতো জায়গায়। প্রকৃতি নির্ভর এই পর্যটনকেন্দ্রগুলো শুধু বিনোদনের উৎস নয়; এগুলো ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ব্যবসা, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে সিলেটকে প্রচারের সুযোগও সৃষ্টি করছে।

পর্যটন টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথম শর্ত প্রকৃতি রক্ষা। টোয়াস-এর আহ্বায়ক হুমায়ূন কবীর লিটনের মতে, “প্রকৃতির ক্ষতি মানুষ দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়। সাদাপাথর আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে—আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।” আসলেই, প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ যত কম হবে, পর্যটনের আকর্ষণও তত বেশি থাকবে।

জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা স্থানীয় দখলদারদের ছাড় না দিয়ে সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা পর্যটন ও পরিবেশ রক্ষার জন্য এক নতুন মাইলফলক হতে পারে।

তবে শুধু অভিযান নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারও প্রয়োজন রয়েছে। টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রকৃতি অক্ষুণ্ণ রেখে আয় বাড়ানো যায়। সিসি ক্যামেরা, নিয়মিত তদারকি, স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি—এসবই প্রশাসনের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

ডিএস/এমসি

Explore More Districts