বিশেষ প্রতিবেদক->>
ফেনীর দাগনভূঞার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাজী রুনা লায়লা নামে এক সহকারি শিক্ষকের ২০ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। একইভাবে ফুলগাজীর আরেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ বদিউল আলমের অভিজ্ঞতাও কম নয়। তবে সকল জাল সনদধারী শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া গৃহীত সকল ভাতা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। গত ১৮ মে এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখা) মো. সেলিম সিকদার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জাল সনদধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
রুনা লায়লা ২০০৮ সালে যোগদানের পর থেকে একটানা দাগনভূঞা উপজেলার ফাজিলের ঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে চলেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যাচাই বাছাই শেষে গত ২০১৭ সালে রুনা লায়লার শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয় বলে জানায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) । ফলে নিয়োগ বিধিসম্মত না হওয়ায় এমপিওভুক্তির পর থেকে রুনা লায়লার গৃহীত ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭২০ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার নিদের্শসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রুনা লায়লা ২০০১ সালে ফেনী সদরের উপজেলার বিরলী রতনপুর হাজী ছৈয়দ রহমান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদে যোগদান করেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর সেখান থেকে বদলি হয়ে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দাগনভূঞা উপজেলার ফাজিলের ঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রুনা লায়লা। বর্তমানে তিনি সেখানেই শিক্ষকতা করছেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে তিনি ৫ হাজার ১০০ টাকার স্কেলে এমপিওভুক্ত হন। মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গত ২০০৮ সালের ১ জুলাই হতে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিনি ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭২০ টাকা বেতন-ভাতা হিসেবে গ্রহণ করেন, যা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। ওই সময়ের পর তিনি বেতন ভাতা গ্রহণ করে থাকলে তাও ফেরত দিতে বলছে মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে কাজী রুনা লায়লার সাথে সাক্ষাত করতে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করার পর তিনি একবার সাড়া দেন। তবে গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পাবার পর তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর আরও একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি আর কোন সাড়া দেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল হক জানান, বিষয়টি জানলেও মন্ত্রণালয় হতে এখনো কোন লিখিত চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফাজিলের ঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি জানার পর ওই শিক্ষককের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফাজিলের ঘাট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামাল পাশা জানান, বিষয়টি শুনেছি। কোনো চিঠি পাইনি। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে চিঠি পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যাচাই-বাছাইয়ে এসব জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারী চিহ্নিত করা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে সনদ প্রদানকারী দপ্তর প্রধান বা প্রতিনিধির সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সনদ যাচাই করে জাল সনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। গত ১৮ মে চিঠি দিয়ে জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নিদের্শনায় জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬৭৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত, একই সঙ্গে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া অবৈধভাবে তাদের গ্রহণ করা বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা, যাঁরা অবসরে গেছেন তাঁদের অবসর সুবিধা বাতিল, স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের মাধ্যমে আদায় এবং জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত তালিকায় ৩৭১ নম্বরে রয়েছেন কাজী রুনা লায়লা। ওই তালিকায় তার কর্মস্থল হিসেবে রতনপুর হাজী ছৈয়দ রহমান স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়কে দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ওই শিক্ষক বর্তমানে দাগনভূঞায় কর্মরত আছেন। চিঠিতে আমাদের বিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করা হলেও তার ব্যক্তিগত ইনডেস্ক নাম্বারও উল্লেখ আছে। ইনডেক্স নাম্বার অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিঠি হয়তো ওই শিক্ষককের বর্তমান কর্মস্থলে যেতে পারে। আমার এখানে আসলে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই তালিকার ৩৬৫ নম্বরে রয়েছেন ফুলগাজীর খাজুরিয়া মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. বদিউল আলম। তার ইনডেক্স নম্বর ১০৬২৩৪১।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম জানান, ২০০৬ সালে বদিউল স্কুল ছেড়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।