ফুটপাতের ক্রেতাদের ভিড়

ফুটপাতের ক্রেতাদের ভিড়

মোশফিকুর রহমান
নিম্ন আয়ের মানুষজন তাদের চাহিদা মতো পুরাতন কাপড় কেনার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে। গত বছরের জুন মাসে ভয়াবহ বন্যায় ঘর বাড়ি, আসবাবপত্র পানিতে নষ্ট হয়। বানের জলে ভেসে যায় ঘরে রাখা পোষাক পরিচ্ছদ। এখন কম দামে প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন তারা।
এদিকে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষনে হরেক রকম পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফুটপাতের দোকানিরা। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে শুরু করে আলফাত স্কয়ার, পুরাতন কোর্ট পয়েন্ট, নতুন কোর্টের সামনে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে কেনা বেচা। ফুটপাতের এসব দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও ভিড় জমাচ্ছেন।
ফুটপাতের দোকানে একটি শার্টের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। পুরাতন শাড়ি ১৫০-২০০ টাকা, প্যান্ট ১০০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধ্যের মধ্যে থেকেই পছন্দের পোশাকটি বেছে নিতে চেষ্টা করছেন নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষগুলো।
নতুন কোর্ট পয়েন্টের সামনে বসা বিক্রেতা নুর হোসেন জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। ব্যবসা মোটামুটি ভালোই হয়। তবে বৈশাখ মাসে শহরে লোকজন কম আসেন, এইজন্য বিক্রিও কম।
পাশেই বসা ব্যবসায়ী সুহেল মিয়া বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা করছি। করোনা মহামারীর সময় ব্যবসায় লস হয়েছে। গত বন্যার সময়ও আমার ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহরে থাকি। লস কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চলছি। এখন বেচাকেনা কম। কিস্তির টাকা দিয়ে কোনোভাবে দিন কাটছে।
তিনি বলেন, ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে আমাদের লাভ লোকসান। কেননা আমরা এক একটি কাপড়ের গাইট কিনি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। সেই বিদেশী গাইটগুলো থেকে কখনো ভালো কাপড় বের হয়, কখনো খারাপ।
শাল্লা উপজেলার ইসহাকপুর থেকে কৃষক আঙ্গুর মিয়া বলেন, ১৫০ টাকায় দুটি শার্ট কিনেছি। এসব পুরাতন কাপড় আমর মতো গরিবদের রক্ষা করেছে।
সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের দিনমজুর কামাল মিয়া বলেন, গত বন্যায় আমার ঘরে রাখা কাপড় চোপড় পানিতে ভেসে গেছে। আমার পরিবারে স্ত্রী সন্তান সহ ৮ জন সদস্য আছে। আয় রোজগার কম, খরচ বেশি। নতুন কাপড় কিনা সম্ভব না। একটি, দুটি করে পুরান কাপড় কিনছি। গেল কয়দিন আগে আমার বড় ছেলে, বড় দুই মেয়ের লাগি ফুটপাতের দোকান থেকে শার্ট, ফ্রগ কিনেছি। আজকে আমার লাগি একটা শার্ট ১০০ টাকায় কিনেছি।
ভাতেরটেক গ্রামের বালু পাথর ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া বলেন, আমি ১০টি শাড়ি কিনেছি ১৫০০ টাকায়। কম খরচে এগুলো দিয়ে আমার ঘর সাজাব।
শহরের হাজীপাড়া এলাকায় ভাড়ায় থাকেন রিকশা চালক মাইনুদ্দিন বলেন, আমি প্রায়ই এখানে এসে কাপড় কিনি। সস্তায় পাওয়া যায়। আমরা গরিব মানুষ পুরান কাপড় পড়েই দিন কাটাইতে অইব।

Explore More Districts