খুলনা সংলাপে হুঁশিয়ারী
স্টাফ রিপোর্টার ঃ পশুর নদীর খননকৃত বালুর কবল থেকে বাণীশান্তা ইউনিয়নের তিনশ’ একর তিন ফসলি কৃষিজমি রক্ষায় করণীয়-শীর্ষক খুলনা সংলাপে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেছেন, আমরা আর বালুর সাথে বসবাস করতে চাই না। লবণদস্যু তাড়িয়ে আমরা তিন ফসলী জমি পেয়েছি। আজ আবার তা হারাতে চাই না। বালুবিরোধী এ আন্দোলন কোন সরকার বিরোধী বা সরকারের উন্নয়ন বিরোধী আন্দোলন নয়, এটি দাকোপবাসীর বাঁচা-মরার লড়াই। বরং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা তথাকথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে কৃষি জমি নষ্ট করতে চায় তারাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে বালুর নিচে লাশের পর লাশ পড়ে থাকবে, তারপরেও কৃষি জমি নষ্ট হতে দেয়া হবে না। তারা হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, প্রয়োজনে জীবন দেবো তবু কৃষিজমি নষ্ট হতে দেবো না।
সংলাপে বক্তারা আরও বলেন, দাকোপের জমিতে এখন ধান, তরমুজ আর রবি শষ্য হয়। কিন্তু বালু ফেলা হলে সেখানে কিছুই হবে না। বরং এক শ্রেণির আমলা সরকারকে ভুল বুঝিয়ে কাগজে-কলমে দেখাচ্ছে যে, কৃষি জমি নষ্ট হবে না, বরং সেখানে শিল্প বিপ্লব ঘটবে। যা জনগনের সাথে রীতিমতো প্রতারণার শামিল বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
বাণীশান্তার তিনফসলি উর্বর জমিতে মোংলা বন্দর কর্তৃক পশুর নদী খননের বালি ফেলার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ইতিমধ্যেই খননকৃত বালি ফেলার কারনে চিলা এলাকার পশুর নদী পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা-স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। খননকৃত বালি দ্বারা পশুর নদীর অববাহিকার ব-দ্বীপ পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বাণীশান্তার তিনশ’ একর কৃষিজমিতে খননকৃত বালি ফেলার সিদ্ধান্ত’র বহু বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে। তাই পশুর নদী খননের সমস্যা সমাধানের জন্য টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
গতকাল শনিবার সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বাণীশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার আহ্বায়ক এ্যাড. বাবুল হাওলাদার। সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।
বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য মো. নূর আলম শেখের সঞ্চালনায় এসময় বক্তৃতা করেন, সিপিবি’র কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য এস এ রশিদ, খুলনা পরিবেশ মঞ্চ’র আহ্বায়ক এ্যাড. কুদরত-ই-খোদা, সাংবাদিক-গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী, ক্লিন খুলনার প্রধান নির্বাহি হাসান মেহেদী, দাকোপ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড়, সাবেক ছাত্রনেতা পূর্ণেন্দু দে, বাসদ নেতা জনার্দন দত্ত নান্টু, ওয়ার্কার্স পাটির নেতা শেখ মহিদুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) নেতা কমরেড মোজাম্মেল হক, সাংবাদিক এইচ এম আলাউদ্দিন, সিপিডি’র খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী ইকবাল হোসেন বিপ্লব, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এস এম শাহনওয়াজ আলী, বাপা বাগেরহাট জেলার নেতা সৈয়দ মিজানুর রহমান, বাণীশান্তা ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায়, লাউডোব ইউপি চেয়ারম্যান শেখ যুবরাজ, কৃষক নেতা এ্যাড. রুহুল আমীন, কৃষক নেতা গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায়, ছাত্র ইউনিয়ন খুলনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র সৌরভ, বাণীশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা সত্যজিৎ গাইন, বাণীশান্তা ইউপি সদস্য জয়দেব কুমার মানিক, হিরন্ময় মন্ডল, ইউপি সদস্য পাপিয়া মিস্ত্রি, উন্নয়নকর্মী মেরিনা যুথী, চিলা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা হুমায়ুন কবির প্রমুখ।