প্রবাসী নেতাদের কাছে ধরাশায়ী হতে পারেন হেভিওয়েট নেতা

প্রবাসী নেতাদের কাছে ধরাশায়ী হতে পারেন হেভিওয়েট নেতা

প্রবাসী নেতাদের কাছে ধরাশায়ী হতে পারেন হেভিওয়েট নেতা

সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকা প্রায় অর্ধেকে নেমে এলেও কয়েকটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশেষ করে যেসব আসনে হেভিওয়েটরা প্রার্থী হয়েছেন সেসব আসনেই এমন জটিলতা। দ্বিতীয়ত কেন্দ্রীয় নেতা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, প্রবাসী ও দলের দুর্দিনের কাণ্ডারি, ত্যাগীরা যেসব আসনে প্রার্থী হয়েছেন সেসব আসন নিয়েও বেশ ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকে। কারণ ওইসব আসনে প্রবাসের প্রভাবশালী নেতারা মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। এ কারণে মনোনয়ন দৌড়ে কোনো কানো আসনে প্রবাসের নেতাদের কাছে হেভিওয়েট নেতাদের ধরাশায়ী হওয়ার ঘটনারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেটের ১৯ আসনে এমন প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ডজন খানেক। মনোনয়ন নিয়ে কয়েকটি আসনে তারা মুখোমুখি।

বিভাগের ১৯ সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সিলেট-১। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দুজন। দুজনই আবার বড় নেতা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তারা হলেন— সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনে তিনবারের নির্বাচিত এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। কেউ কেউ আবার বলছেন, লন্ডনের প্রভাবশালী পাশা খন্দকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। এতে করে তার মনোনয়ন নিয়ে টেনশন করার কিছুই নেই।

সিলেট-২ আসন ইলিয়াস আলীর আসন বলেই পরিচিত। ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তবে সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষনেতা হুমায়ুন কবিরও এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

সিলেট-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন তিন প্রভাবশালী। এরমধ্যে দুজন প্রবাসী। একজন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক এবং ব্যারিস্টার এমএ সালাম। মাঠের নেতাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী এখনও মাঠেই আছেন। সিলেট-ঢাকা মহসড়কে মঙ্গলবার শোডাউন হয় তার পক্ষে। এছাড়াও এ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ হকের ছেলে ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিনও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

সিলেট-৪ আসনে অনাবাসী বিএনপির প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি। এ আসনে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতার গুঞ্জন উঠলেও তিনি ওই আসনে নির্বাচনে রাজি নন। ফলে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর নাম ওঠে এসেছে লাইমলাইটে। তবে ভোটের বাজারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাকিম চৌধুরী এখানে বড় ফ্যাক্টর। এছাড়াও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, বিএনপি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেওয়া অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের সহধর্মিনী অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম এবং ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শামসুজ্জামান জামান মঙ্গলবার গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে জনসভা করেন। এর আগে সোমবার সিলেট নগরীতে মোটরসাইকেল মহড়া হয় তার পক্ষে।

সিলেট-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন যুদ্ধে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা মামুনুর রশীদ মামুন। তবে প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর পরিবারের প্রতি স্থানীয় ভোটারদের আবেগ ভোটের সমীকরণে একটা বড় ফ্যাক্টর। চৌধুরী পরিবারের সমর্থন যেদিকে সেদিকে ভোটের পাল্লা ভারি হবেই—এমন বিশ্বাস স্থানীয়দের। তবে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজীন চৌধুরী মাঠে থাকলেও সর্বশেষ তিনি নির্বাচন না করার সম্ভাবনাই বেশি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন। জোট হলে এ আসন জমিয়তকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যপারে আলোচনা চলছে। এখানে বিএনপির জোটের প্রার্থী হিসাবে দেখা যেতে পারে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে।

সিলেট-৬ আসনে কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাহের শামীম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হোসেনের মেয়ে সৈয়দা আদিবা হোসেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবিনা খান পপি ও চিত্রনায়ক হেলাল খান।

এছাড়া হবিগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মেয়র জিকে গউস শক্তিশালী প্রার্থী। তবে তার প্রতিপক্ষও তার আসনে বেশ তৎপর।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে আছেন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন ও কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী। এ

ছাড়া মৌলভীবাজারে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান, মুজিবুর রহমান, সুনামগঞ্জের বর্ষীয়ান রাজনীতিক নাসির উদ্দিন চৌধুরী ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসমবায় বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার মাঠে কাজ করছেন মনোনয়নের জন্য।

বিএনপির কেন্দ্র সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৩৬ জনের মধ্যে ৬৬ জনকে আপাতত মাঠে রেখেছে। শিগগিরই এই তালিকা আরও সংক্ষিপ্ত করে শুধু ১৯ আসনের ১৯ জনের নাম ঘোষণা করবে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউস মঙ্গলবার রাতে জনসভা করছিলেন হবিগঞ্জের রাজনগরে।

বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, গোটা সিলেটবাসী এখন কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে। প্রার্থী চূড়ান্ত হলে ধানের শীষের পক্ষে মাঠের প্রচারণার সব মনোনয়ন প্রত্যাশীই নামবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত।

Explore More Districts