বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নড়াইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানান রবিউল ইসলাম লিমনের স্ত্রী সাবরিনা আক্তার। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আহত জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই বিপ্লবী যুব সংগঠন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ মোস্তাফিজ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লিমনের স্ত্রী সাবরিনা আক্তার, তার চাচা মোল্যা আহমেদ সাঈদ (টুলু) এবং জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মাহমুদা সুলতানা রিমি।
সংবাদ সম্মেলনে সাবরিনা আক্তার বলেন—
“আমার স্বামী প্রকৃত অর্থেই একজন জুলাই শহীদ। তার মৃত্যুর পরও মিথ্যা অপবাদ পরিবারের উপর মানসিক যন্ত্রণার বোঝা হয়ে আছে। আমরা এ অপবাদ প্রত্যাহার ও সত্য উদঘাটনের দাবি জানাই। প্রথম আলোকে অবশ্যই ওই সংবাদ প্রত্যাহার করতে হবে এবং সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে ভুক্তভোগী পরিবার ও শহীদদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে।”
তিনি জানান, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় গণঅভ্যুত্থানের সময় লিমন গুলি ছুড়েছিলেন ও এক শিশুকে আহত করেন, পরে উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখে।
কিন্তু পরিবারের দাবি— এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। লিমন ছিলেন আন্দোলনপন্থী ছাত্রজনতার একজন সক্রিয় কর্মী। তাঁর ফেসবুক আইডিতে ( রবিউল ইসলাম লিমন -এর ফেসবুক আইডি
) অসংখ্য পোস্ট ও ভিডিও রয়েছে, যেখানে তিনি আন্দোলনের পক্ষে সরব ছিলেন। এমনকি শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তিনি সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন।
ঘটনার দিন উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিজয় মিছিল চলাকালে হঠাৎ গোলাগুলির পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে উত্তেজিত জনতা ভুলবশত লিমনকে ‘র’-এর এজেন্ট বা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মী মনে করে বেধড়ক মারধর করে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি গুলি চালিয়েছেন। এই মর্মান্তিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে জনতার হাতে লিমন মব লিঞ্চিংয়ের শিকার হন।
শেখ মোস্তাফিজ লিখিত বক্তব্যে বলেন—
“১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট। সেখানে প্রকৃত জুলাই শহীদ মো. রবিউল ইসলাম লিমনকে ভুয়া শহীদ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা তার আত্মত্যাগের প্রতি চরম অবমাননা এবং সত্যের পরিপন্থী।”
পরিবার জানায়, লিমন ছিলেন প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন-এর স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক এবং পথশিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষাদান করতেন। সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও তার মানবিক কাজের সাক্ষ্য দিতে পারেন। এমন একজন সমাজসেবক নিজেরই পক্ষে থাকা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাবেন— তা কল্পনাতীত।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সাংবাদিকতা সমাজের দর্পণ— যেখানে সত্য উদঘাটন ও তা নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করা অপরিহার্য। একটি ভুল প্রতিবেদন একজন নির্দোষ মানুষকে মৃত্যুর পরও কলঙ্কিত করতে পারে— যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।