পুলিশ জনগনের বন্ধু: এ কথা প্রমাণ করেছে সিলেট জেলা পুলিশ

পুলিশ জনগনের বন্ধু: এ কথা প্রমাণ করেছে সিলেট জেলা পুলিশ

মুহিত চৌধুরী: দীর্ঘ দিন থেকে পুলিশ সর্ম্পকে মানুষের মনে একটা নেতিবাচক ধারণা ছিলো। অথচ এই ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণিত করেছে সিলেট জেলা পুলিশ। সিলেটের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম -এর দিকনির্দেশনা এবং নতুন নতুন পরিকল্পনা সিলেট জেলা পুলিশকে এই উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেছে।

সিলেটের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের যে কাজগুলো সুধী মহলের নজর কেড়েছে তা হলো:

১.ভয়াবহ করোনা কালে মানুষ যখন তার স্বজনদের লাশ দাফন করতে এগিয়ে আসে নাই তখন জেলা পুলিশ তাদের জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে আসে। সকল ভয়কে পদদলে তারা এইসব লাশদের দাফনের ব্যবস্থা করে। করোনাকালে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি। কাজহীন নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ।

২. সিলেট জেলার প্রতিটি থানায় জিডি এবং মামলা গ্রহনের ক্ষেত্রে বিরাজমান সকল সমস্যা দূর করে এটিকে সহজ এবং জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট অনলাইনের মাধ্যমে দ্রুত পাবার ব্যবস্থা করা।

৩. পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন সাত দিনের মধ্যে করে রিপোর্ট পেশ করার ব্যবস্থা করা । বিশেষ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শেষ করা।

৪. সিলেটের প্রতিটি থানায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা একটি বিশেষ চেয়ার স্থাপন করা।

৫.পুলিশে নিয়োগ,পদউন্নতি, বদলি সকল ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতার নজির স্থাপন করা।

৬. সিলেট জেলা পুলিশকে দুর্নীতিমুক্ত একটি পেশাদার মানবিক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে তাদেরকে তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা। সাইবার ক্রাইম বর্তমান সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় । এ সমস্যা সমাধানে সিলেট জেলা পুলিশের ২৫জন এসআইকে বিশেষ প্রমিক্ষণ দেয়া।

৭.রায়হান হত্যা মামলার অন্যতম আসামী এসআই আকবরসহ বিভিন্ন অপরাধীদের দ্রুত আটক করার দক্ষতা জেলা পুলিশের অর্জন করা।

পুলিশ জনগনের বন্ধু: এ কথা প্রমাণ করেছে সিলেট জেলা পুলিশ৮. যে মানবিক কর্মের জন্য পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন সিলেটের মানুষের মনে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন সেটা হলো সিলেটের ভয়াবহ বন্যায় দুর্গতমানুষের পাশে দাঁড়ানো। অনেকেই বন্যাদুর্গত মানুষজনকে সহায়তা করেছেন। কিন্ত জেলা পুলিশের সহায়তা ছিলো ভিন্ন। যেখানে কেউ যেতে পারেনি সেই দুর্গম এলাকায় সিলেট জেলা পুলিশ ত্রান বিতরণ করেছে। সেইসব অসহায় মানুষদেরে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছে দিয়েছে।

৯. ঈদের দিন সকল মানুষ ভালো এবং উন্নতমানের খাবার খেতে চায়। বানভাসী মানুষদের সে সুযোগ নেই। এই বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে মানবিক পুলিশ সুপার সিলেটের বানভাসি মানুষদের পোলাও-মাংস খাওয়াবার সিদ্ধান্ত নেন। রোববার (১০ জুলাই) ঈদুল আজহার দিনে সিলেট জেলার ১১টি থানা এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাংস পোলাও বিতরণ করে জেলা পুলিশ। সিলেট জেলা পুলিশের এমন মানবিক ও ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড সিলেটজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

১০. জেলা পুলিশের মধ্যে সততা এবং কর্মনিষ্ঠা বৃদ্ধি করা। প্রতি থানায় পর্যায়ে কনেস্টবল থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে এ ধরণের একটি ধারণার সৃস্টি করা যে কোন ধরণেরর অনৈতিক এবং অনিয়ম করে কারো পার পাবার সুযোগ নেই।

আমাদের দেশে প্রশাসনে যারা থাকেন তারা সাধারণত মানুষের সাথে মিশতে চান না পদ-পদবীর ভারে নিজেকে আলগে রাখেন, মেপে-ঝোকে কথা বলেন। আমলাতান্ত্রিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা।
পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন। তাঁর মতে মানুষের সাথে না মিশলে মানুষের সমস্যা, দেশের সমস্যা কীভাবে সমাধান করবো। তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে দেশের মালিক জনগন। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী মাত্র। সুতরাং মালিকের সাথে সে রকম আচরণ করতে হবে যাতে মালিক আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন।
এক প্রশ্নের জবাবে দৈনিকসিলেটডটককে তিনি বলেন, সরকারী ছকবাধা দায়িত্ব পালনের পর মানবিক বিষয়গুলো নিয়ে আমি ভাবি। দিনের শেষে যখন ভাবি, সারা দিন মানুষের কল্যাণে কী করেছি, তখন মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়ে যায় আরো বেশি কিছু করতে না পারার কারণে।
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি জনবান্ধব সরকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনেকরি আমাদের প্রশাসনও জনবান্ধব হতে হবে। এখন আর আগের সেই দিন নেই, আপনি একজন বড় কর্মকর্তা হয়ে বসে থাকবেন, জনগনের সাথে মিশবেন না।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম তাঁর মেধা এবং কর্মদক্ষতার জন্য সরকার তাকে সম্প্রতি অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদউন্নতি দিয়েছেন। হয়তোবা কিছু দিনের মধ্যে তিনি সিলেট ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে চলে যাবেন। নি:সন্দেহে সিলেটবাসী অত্যন্ত যোগ্য একজন কর্মবীরকে মিস করবেন।

তবে তারা মনে করছেন, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন যে পদে যেখানেই যান না কেন তিনি তাঁর মেধা, সততা এবং যোগ্যতা দিয়ে দেশ মাটি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। একটি উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগাবেন। প্রাপ্তির তালিকায় সেটাইবা কম কী।

 

মুহিত চৌধুরী:
সম্পাদক দৈনিকসিলেটডটকম, সভাপতি সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ডিএস/এমসি

Explore More Districts