পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনিতে এতো পাথর উৎপাদন কখনই হয়নি

পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনিতে এতো পাথর উৎপাদন কখনই হয়নি

পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনিতে এতো পাথর উৎপাদন কখনই হয়নি

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া খনি থেকে গত জুলাই মাসে রেকর্ড পরিমাণ ১ লাখ ৩৯ হাজার টন পাথর উৎপাদন করা হয়েছে। এর আগে কখনই একমাসে এতো বিপুল পরিমাণ পাথর উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, প্রতিমাসে উৎপাদন বাড়লেও পাথর বিক্রিতে গতি নেই। পাথর বিক্রিতে গতি না থাকায় রেকর্ড পরিমাণ পাথর উৎপাদন করেও সময়মত বিল পাচ্ছে না জিটিসি। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রায় ১১ লাখ টন পাথর উৎপাদনের বিপরীতে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৭২ হাজার টন।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই/২০২৩) ১ লাখ ৩৯ হাজার টন উৎপাদনের বিপরীতে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার টন পাথর। সময়মত উৎপাদন বিল না পাওয়ায় সাত শতাধিক দেশীয় খনি শ্রমিক-কর্মচারী ও প্রায় একশ বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর বেতনভাতা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উৎপাদন ঠিকাদারকে। এতে করে খনির উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

জানা গেছে, জিটিসি প্রতিমাসে ১ লাখ ৩০ হাজার টন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার টন পাথর উৎপাদন করে দিচ্ছে। কিন্তু উৎপাদিত পাথরের অর্ধেকও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে ঠিকাদারের বিল ঠিকমত পরিশোধ করতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, মধ্যপাড়ার পাথরের দাম বেশী হওয়ায় পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে ভারত থেকে পাথর আমদানি করছে। মধ্যপাড়ার ৫-২০ (৩-৪) সাইজের প্রতিটন পাথরের মূল্য ৩ হাজার ৬৫০ টাকা।

সেখানে বুড়িমারী স্থলবন্দরে একই সাইজের ভারতীয় পাথর প্রতিটন ৩ হাজার ১০০ টাকা এবং ভুটানের পাথর ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর আমদানীকারক রাইসা ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আশরাফুল আলম।

তবে একই সাইজের ভারতের পাকুড় থেকে আমদানি করা প্রতিটন পাথরের মূল্য ৪ হাজার ৪৫০ টাকা বলে জানিয়েছেন বাংলাহিলি স্থলবন্দরের পাথর আমদানীকারক শম্পা ট্রেডার্সের মালিক ইদ্রিস আলী মিতু এবং এবি ইন্টারন্যাশনাল এর ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম। পাকুড়ের পাথর মধ্যপাড়ার পাথরের চেয়ে ভালমানের বলে সূত্র জানায়।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু দাউদ মোঃ ফরিদুজ্জামান ভোরের কাগজকে জানান- বৈশ্বিক মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বমন্দা চলছে।

সরকারের অনেক মেগা প্রকল্প শেষের পথে। সর্বোপরি নির্বাচনী বছর হওয়ায় নির্মাণ কাজ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে পাথর বিক্রিতে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত মে মাসে মূল্য কমিয়ে ৫-২০ (৩-৪) সাইজের প্রতিটন পাথরের মূল্য ৩ হাজার ৬৫০ টাকা, ৬০-৮০ সাইজ ৩ হাজার ৪০০ টাকা ও বোল্ডার সাড়ে ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে প্রতিটন পাথর ৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হতো। খনি ইয়ার্ডে বোল্ডার ও ডাস্ট ছাড়া ৫ লাখ ৩৫ টন পাথর মজুদ রয়েছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৫ মে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন তিন শিফটে ৫ হাজার মে.টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক শিফটে ৭-৮’শ মে.টনের বেশী পাথর উত্তোলন করতে পারেনি।

এরফলে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৬ বছরের জন্য খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় একমাত্র মাইনিং কাজে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া কর্পোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)।

বর্তমানে খনি ভূগর্ভে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মাইনিং ইক্যুইবমেন্ট বসানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান সুদক্ষ প্রকৌশলীদল ও দক্ষ খনি শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন কাজ চালানো হচ্ছে। জিটিসির হাত ধরে খনিটি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মত লাভের মুখ দেখে।

জিটিসি পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় টানা চার অর্থবছর থেকে মুনাফা করে আসছে খনিটি। জিটিসির প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী চুক্তি শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস আগে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে ৭ দফা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেও বিদেশিদের তেমন সাড়া মেলেনি।

এ অবস্থায় খনির পাথর উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন করছে জিটিসি। দ্বিতীয়দফা চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬ বছরে প্রায় ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকার বিনিময়ে ৮৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করে দিবে।

Explore More Districts