
সালমান হাসান রাজিব
চাঁচড়া চেকপোস্ট-খোলাডাঙ্গা খালের অনুমোদনহীন অপ্রশস্ত ব্রিজগুলোর জন্য ফের ডুবলো যশোর শহরের খড়কি ও কারবালাসহ পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তৃত অঞ্চল। কম প্রশস্তের কংক্রিটের পাইপ ফেলে খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত নয়টি ব্রিজ খালটিকে চেপে ধরায় এটির প্রস্থ হয়েছে সরু। আর রাস্তার জন্য ফেলানো পাইপে খালটি এক অর্থে ভরাট হয়ে গেছে। অথচ এই খাল দিয়েই পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডসহ শহরের আরো কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু খালটির দখল, ভরাট ও অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিয়ে উদাসীন সংশ্লিষ্টরা।
এবারও টানা বৃষ্টিতে যশোরের অন্যান্য প্রান্তের মতন তলিয়ে গেছে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা। খড়কি জেবিন মোড়, পীড়বাড়ি রোড, ধোপাপাড়া, ডিসি বাংলো সংলগ্ন সিএন্ডবি সড়ক, ডালমিল মাঠপাড়াসহ আরো অনেক জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার দিবাগত রাতে টানা বর্ষণে এরকম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারি এমএম কলেজের দক্ষিণ গেট পেরিয়ে পশ্চিম পাশের জেবিন মোড় এলাকা হাঁটু সমান পানিতে ডুবে আছে। পীরবাড়ি রোড, ধোপাখোলা এলাকা, এমএম কলেজ শহিদমিনারের পেছন পাশের ও মসজিদ সংলগ্ন রাস্তাও গোড়ালি সমান পানিতে ডুবে আছে। অন্যদিকে ওয়ার্ডটির চাঁচড়া ডালমিল মাঠপাড়া ও চেকপোস্ট থেকে খোলাডাঙ্গা রেলক্রসিং পর্যন্ত এলাকায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এসব এলাকা ছাড়াও শহরের রেলরোড, বেজপাড়া চিরুনি কলের পাশে টিবি ক্লিনিক বাইলেন, বেজপাড়া জমাদ্দার পাড়া, আনসার ক্যাম্প, শংকরপুর ইস্হক সড়ক, পিটিআই সড়কসহ ঘোপের কিছু অংশ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এসব এলাকার কোথাও গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি জমেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, যশোর শহরের চাঁচড়া থেকে উত্তর দিকে খোলাডাঙ্গা রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগের খালটি দখল করে ৯টি ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া চার জায়গায় কংক্রিটের পাইপ ফেলে খাল মাটি ভরাট করে রাস্তা বানানো হয়েছে। গাজীর বাজার এলাকায় খাল ভরাট করে বানানো হয়েছে ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়। প্রায় দুই কিলোমিটার বিস্তৃত খালটিতে অনুমোদনহীন ও অপরিকল্পিত ব্রিজগুলোর নিচে পানি প্রবাহের জন্য যে পরিমাণ প্রশস্ততা থাকা প্রয়োজন; তা রাখা হয়নি। এ কারণে শহরের পানি নিষ্কাশনে বিঘিœত হচ্ছে।
তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ব্যক্তিগত জমির মালিকরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারবেন। কিন্তু সংযোগ সড়কের জন্য পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত করে এমন ব্রিজ-কালর্ভাট নির্মাণ করা যাবে না। খালে অপ্রশস্ত পাইপ স্থাপনও করা যাবে না। সূত্র মতে, একজন বাদে এখানকার আর কেউ ব্রিজ বা সংযোগ সড়ক নির্মাণের অনুমোদন নেয়নি।
চেকপোস্ট খোলাডাঙ্গা খালসংলগ্ন মাঠপাড়ার বাসিন্দাদের বর্ষার দিন আসলে তাদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। খালটির দখল, অপ্রশস্ত ব্রিজ ও বাসাবাড়ির রাস্তার জন্য খালে পাইপ ফেলে মাটি ভরাট করায় খালটি এখন মৃতপ্রায়। পানিপ্রবাহ বলতে গেলে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কচুরিপানায় ভরে গেছে খালটি। বর্ষাকাল আসলে এই খাল দিয়ে পানি বের হতে পারে এ কারণে না বলে এলাকাটি ডুবে যায়। এখানকার বাসিন্দাদের অনেকে বর্ষা মৌসুমে অন্যত্র বাসাভাড়া করে থাকেন।
দেখা গেছে, চলাচলের জন্য নির্মিত ছোট ছোট কালভার্টের মতো ব্রিজ খালটিকে চেপে ধরেছে। ফলে ৬০ ফুটের প্রশস্ত খাল কোথাও ২০ ফুট কোথাও পাঁচ ফুটে নেমে এসেছে। চেকপোস্ট এলাকায় কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সামনে একটি ছয়তলা ভবনের মালিক খাল দখল করে ব্রিজসহ গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান নির্মাণ করেছেন। ব্রিজটির নিচে পানি প্রবাহের চ্যানেলটি খুবই অপরিসর। গাড়ি পার্কিয়ের স্থানটিও খালের অর্ধেক দখল করে বানানো হয়েছে। এছাড়াও এখানকার পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের সামনেও বেশ কয়টি ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে; যেগুলোর নিচ দিয়ে পানি ঠিকমতন নিষ্কাসন হয় না। এদিকে, ইউনিক তেলপাম্প এলাকায় রুরাল রিকন্সট্রাকশন ফাউন্ডেশন অফিসের সামনে খালের মধ্যে পাইপ বসিয়ে তার উপর মাটি ফেলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, পানি স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত করে খালে কোন স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তার ভাষ্য মতে, প্রত্যেক জমির মালিক যাতায়াতের পথ পাওয়ার অধিকার রাখেন। সেজন্য পানি চলাচলের উপযোগী করে অস্থায়ী ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু স্থায়ী কোন স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। নিয়মের বাইরে যদি এরকম কেউ করে থাকেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিবুল আলম জানিয়েছেন, এই খাল দিয়েই ওয়ার্ডের সমস্ত এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়। তাই খালের উপর নির্মিত অপরিকল্পিত ও অপ্রশস্ত ব্রিজগুলোর জরুরি অপসারণ দরকার। ওয়ার্ড এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বার্থে এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনাও করেছেন। পাশাপাশি সমস্যাটি সমাধানের বিষয়টি পৌর পরিষদের সভায়ও উপস্থাপন করবেন। স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ ঘোঁচাতে খালের দখল অপসারণে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবেন।