পল্লী বিদ্যুতের গ্যাঁড়াকলে অতিষ্ঠ মানুষ/ জামালগঞ্জ-সাচনা বাজারে বিদ্যুতের দ্বৈত নীতি

পল্লী বিদ্যুতের গ্যাঁড়াকলে অতিষ্ঠ মানুষ/ জামালগঞ্জ-সাচনা বাজারে বিদ্যুতের দ্বৈত নীতি

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
পল্লী বিদ্যুতে অতিষ্ঠ জামালগঞ্জের মানুষ। উষ্ণতম দিনে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং গ্রাহকদের অনেকটা গা-সহা অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু শীতল পরিবেশে এসেও বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। এর মাঝে সুরমায় দ্বিখ-িত উপজেলার একাংশ জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হলেও বিপরীত পার সাচনা বাজারে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক লোডশেডিং মেনে নিতে পারছে না কেউ। এতে করে বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাচনা বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের বেসামাল বৈরি আচরণে উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষও ক্ষোভের যন্ত্রণায় ফুঁসে উঠছে।
অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সময় বিদ্যুৎ পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে গরমে হাঁসফাঁসের বিষয়টি বাদ দিলে বৃষ্টি স্যাঁতস্যাঁতে দিনেও বিদ্যুতের অবস্থা একই রকম। বৃষ্টি ও ঝড়-বাদলের দিনে গ্রামপর্যায়ে বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্নের দোহাই দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন হরহামেশাই দায় এড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন। এমন লুকোচুরি অব্যাহত আছে উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সাচনা বাজারের বেলায়ও। তার বিপরীত পার জামালগঞ্জ উপজেলা সদরে সরকারি সব দপ্তর হওয়ায় বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই সেখানে।
একদিকে, সুরমার এক পার প্রায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। আরেক পারে পুরো উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে বাজার-সদাই ও প্রয়োজনীয় কাজ সারতে প্রতিনিয়ত ছুটে আসলেও বিদ্যুৎহীনতার গ্যাঁড়াকলে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণকে। পল্লী বিদ্যুতের এই দ্বৈত নীতিসহ বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি বর্তমানে বিদ্যুৎ সমস্যা তেমন নেই। যা হচ্ছে তার জন্য আবহাওয়া মূলত দায়ী।
এ ব্যাপারে দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন শাহ বলেন, এই বৃষ্টির দিনেও কারেন্ট আসা-যাওয়া করতাছে। এই আয়, এই যায়। তবে কারেন্ট আইলে থাকে কম সময়। আর কারেন্ট নিয়া গেলে থাকে না দীর্ঘ সময়। এই রকম হইলে সবারই সমস্যা। এক কথায় কারেন্টের লাগি মারাত্মক সমস্যায় আছে মানুষ।
হোমিও চিকিৎসক জান্টু চন্দ বলেন, কারেন্ট একটু থাকে তিনটু থাকে না। এখন তো ঠান্ডার দিন। তারপরও কারেন্ট নাই। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করতে হয় মানুষকে। কারেন্ট না থাকার জন্য অনেকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে থাকে। এ অসহনীয় অবস্থা থেকে মানুষ অচিরেই মুক্তি চায়।
সাচনা বাজারের মহসিন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ও জামালগঞ্জের বাসিন্দা মহসিন কবির বলেন, সরকারি দাপ্তরিক কাজের জন্য জামালগঞ্জ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সাচনা বাজারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জামালগঞ্জে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ থাকলেও সাচনা বাজারের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভয়াবহ। একবার বিদ্যুৎ গেলে তিন-চার ঘন্টা পরও খবর থাকে না। এতে ব্যবসায়িক কাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। দ্রুতই সাচনা বাজারকে ভিআইপি লাইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
জামালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসের সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাচনা বাজারের লাইনটা আসছে সুনামগঞ্জ থেকে। সেখানে বজ্রপাত হলে লাইন বন্ধ থাকে। আবার লাইনের দিকে বজ্রপাত হলেও তা বন্ধ থাকে। মূলত আবহাওয়ার কারণে লাইন ফল্ট হচ্ছে। যে কারণে বিদ্যুৎ থাকছে না। বর্তমানে লোডশেডিং হচ্ছে না। বৈদ্যুতিক গোলযোগের জন্য আবহাওয়াই মূল কারণ।
তিনি আরও জানিয়েছেন, সাচনা বাজারে বিদ্যুৎ থাকে না বলতে সে রকম না। বিদ্যুৎ থাকে, কিছু কম থাকে। তবে সেখানকার লাইনটা হচ্ছে লং লাইন। এ লাইনটা চলে গেছে একেবারে ধর্মপাশা পর্যন্ত। দ্বিতীয়ত বেহেলী, তৃতীয়ত রামনগরের একদম শেষ মাথা পর্যন্ত। লাইনটা বড় হওয়াতে প্রায় সময়ই ফল্ট হয়। আর ফল্ট হলেই পুরো লাইনই বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে বিদ্যুতের সমস্যা হচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানকার বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রায় ৪৬ হাজার। লোকবল আছে মাত্র ১০ জন। তবে জামালগঞ্জে সাব জোনালের কার্যক্রম শুরু হলে লোকবল হবে প্রায় ৪০ জনের মতো। আগামী মাসে সাব জোনালের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন হয়তো সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।

Explore More Districts