মহসিন মোল্যা, বিশেষ প্রতিবেদক-
বছরের পর বছর বাঁশের চরাট আর খোলা আকাশের নিচে কাঠের চৌকিতে চরম কষ্টে রাত কাটে প্রতিবন্ধী সোহাগের। বৃষ্টি ভেজা রাত হয় তার জন্য আরো দূর্বিষহ। এমন অনেক রাত পলিথিন মুড়িয়ে সে কাটিয়ে দেই। প্রচন্ড গরম, কনকনে শীত এমনকি বৃষ্টির রাতেও বাঁশের চরাট আর কাঠের চৌকিই তার রাত যাপনের একমাত্র অবলম্বন। কাঠের চৌকির একপাশে পুটলিতে মুড়িয়ে রেখে দেই তার পরিধানের সকল কাপড় চোপড়। গ্রীষ্মের রাতে কষ্ট না হলেও কনকনে শীত আর বৃষ্টির রাতে তার কষ্টের শেষ থাকে না। প্রতিবন্ধী সোহাগের বাড়ি মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার কাজলী গ্রামে। সে ওই গ্রামের জমির হোসেনের ছেলে। গ্রামের লোকজন তার বাবাকে অনুরোধ করে তার জন্য দুই শতক জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেখানে একটি খুপড়ি ঘর করে কোনোমতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলো সে। বর্তমানে সেখানে ঘরের কোন অস্তিত্বই নেই। সেখানে শুধু মাটির স্তুপ পড়ে আছে। একটা সময় স্ত্রী-সন্তানও তাকে রেখে চলে যায়। এক সময় সে রাজমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালাতো। সবকিছু হারিয়ে এখন সে সকল কাজকর্মই ছেড়ে দিয়েছে। পেটের দায়ে বাজারে বিভিন্ন দোকানে পানি টেনে দু-পয়সা উপার্জন করে। ক্ষুধা পেলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দু-মুঠো চেয়ে খাই।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জন্মের ৫ দিন পরেই প্রতিবন্ধী সোহাগের মায়ের মৃত্যু হয়। প্রতিবেশী এক ভদ্র মহিলা তাকে লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার বাবা জমির হোসেন পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সে সংসারে তার এক পুত্র ও এক কণ্যা সন্তান রয়েছে। সোহাগ ও তার প্রতিবেশীদের অভিযোগ, তার বাবা-মা তার কোন খোঁজ খবর রাখে না।
সোহাগের বাবা জমির হোসেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার সামর্থ্য নেই। তবুও ওর ঘর করার জন্য দুই শতক জমি দিয়েছি। জমিতে ঘর ও ছিলো। কিন্তু এখন কিছুই নেই। ওই জমিতে ওর একটা থাকার ঘর হোক তা আমি ও চাই।
প্রতিবন্ধী যুবক সোহাগ বলেন, আমার জন্মের পরপরই আমার মা মারা যাই। আমার এক দাদী আমাকে মানুষ করে। আমার মা-বাবা আমার কোন খোঁজ রাখে না। আমার ঘর ছিলো, আমার সংসার ছিলো। এখন আমার কিছুই নেই। সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে রাতের নামাজ পড়ে এখানে ঘুমাই। আমার থাকার কোন ঘর নেই। আমার দুই শতক জমি আছে। অনেকের কাছে একটা থাকার ঘর চেয়েছি। কিন্তু কেউ করে দেয়নি।
বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীর সাথে কথা বললে তারা জানান, সোহাগ জন্মের পরপরই মাকে হারিয়েছে। সে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। খুব কষ্টে খোলা জায়গায় বছরের পর বছর থাকছে। বৃষ্টির রাতে কম্বল পেঁচিয়ে পলিথিন মুড়িয়ে থাকে সে। দিন শেষে রাতে একটু থাকার জায়গা হলে ছেলেটা অন্তত বাঁচতো।
শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওয়াসিম আকরাম জানান, সে যদি প্রকৃতই প্রতিবন্দী হয়, তাহলে সমাজসেবা অফিসে আবেদন করলে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মমতাজ মহল জানান, এখন সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। সরকারে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ঘরের প্রজেক্ট আপাতত শেষ হয়ে গেছে। আবার নতুন প্রজেক্ট আসলে বিষয়টি দেখা যাবে।