১৬ April ২০২৫ Wednesday ৭:১৪:০৯ PM | ![]() ![]() ![]() ![]() |
পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এএসএম শামীম আল আজাদকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে, মহাখালী ঢাকায় পদায়ন করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত আসে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী হুসাইন মোহাম্মদ আশিকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠার পর। ১৪ এপ্রিল (সোমবার) ফুটবল খেলার পরে পা ফসকে পুকুরে পড়ে যায়। পরে আশিককে উদ্ধার করে দ্রুত পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলেও অভিযোগ রয়েছে, জরুরি বিভাগে পৌঁছেও প্রায় ৪০ মিনিট পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তখনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পটুয়াখালী শহর ও আশপাশের এলাকা। শিক্ষার্থীরা প্রথমে পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তারা স্বাস্থ্যসেবার চরম অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। আশিকের মৃত্যু হলে পুরো ক্যাম্পাসে নেমে আসে শোক ও ক্ষোভ।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিক্ষার্থীরা মূল ফটকের সামনে এসে বরিশাল-বাউফল সড়ক অবরোধ করেন। এতে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীরা লেবুখালী ইউনিভার্সিটি স্কয়ার সংলগ্ন পায়রা সেতুর টোল প্লাজায় অবস্থান নিয়ে বরিশাল কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা দ্রুত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করে দায়ীদের শাস্তি এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তখন আন্দোলনে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। ভাইস-চ্যান্সেলর তখন বলেন, “আমাদের একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার অবহেলার কারণে আমরা হারিয়েছি। এটা শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটির অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা আশিকের পরিবারের পাশে আছি।”
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ১৬ এপ্রিল (বুধবার) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ডা. এএসএম শামীম আল আজাদকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। গত ১৪ এপ্রিল পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এর মুখে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত হয় ৮ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি, যার প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি।
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বস্তি প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন, তবে অনেকেই একে অপর্যাপ্ত মনে করছেন। আইন অনুষদের শিক্ষার্থী মোঃ খোকন হোসেন লিখেছেন, “ওএসডি করা মানেই কি শাস্তি? ওনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।”
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মারসিফুল আলম রিমন মন্তব্য করেন, “আশিকের মৃত্যুতে শুধু চাকরির পদায়ন পরিবর্তন নয়, দরকার আইন অনুযায়ী বিচার।”
পবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, কেবল ওএসডি নয়—অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের গাফিলতি রোধে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
সম্পাদনা: আমাদের বরিশাল ডেস্ক
শেয়ার করতে ক্লিক করুন: | Tweet |