পঞ্চগড়ে শিক্ষক-আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
আবু সালেহ রায়হান:
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় বিদ্যালয়ে পদ না থাকলেও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নামে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মালাদাম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপেন চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ২টি পদে নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে নেয়া ২০ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের নামে নেয়া বরাদ্দের অর্থের পুরো কাজ না করে লুটপাট, বিদ্যালয়ের একাডেমীর ভবনের আকৃতির পরিবর্তন করে নিজের প্রয়োজনে বাথরুম তৈরী করেছেন। সেখানেও বিপুল বরাদ্দ দেখিয়ে পুরো টাকা খরচ না করার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সেই সাথে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে নিজের খেয়াল খুশিমত আসা যাওয়া ও বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগও আছে। এঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়ের এহেন দৈনদশা দেখে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, রংপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে এবং নিয়োগ বাণিজ্যে বন্ধ সহ সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে লিখিত আবেদন করেছেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, দাতা সদস্য, অভিভাবক সদস্য সহ স্থানীয়রা। আলোচিত এই বিদ্যালয়টির অবস্থান জেলার সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মালাদাম এলাকায়।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা আইন ২০২১ অনুযায়ী মালাদাম দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পদে অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী সহ ৫ জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে পূর্বের নিয়োগ করা দুই জন অফিস সহায়ক ও ১ জন নিরাপত্তা প্রহরী সহ তিনজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রয়েছেন। এদিকে চলতি বছরের গত ৩ জানুয়ারী এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যেমে গত ১৬ই এপ্রিল পবিত্রা রাণীকে আয়া ও পারুল রানীকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে বিদ্যালয়টিতে নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি দুইটি পদে দেয়া এ নিয়োগে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে নেয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকার বেশি। পরে সেই টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না করে পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য সহ আত্মসাৎ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপেন চন্দ্র রায়। এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়াতে ত্রুটি থাকায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী পারুল রানীর বেতনের কাগজপত্র আটকে দিয়েছে রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর। তবে তার বেতনের কাগজপত্র আবারো রংপুরো পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এতকিছুর পরেও গত ৩১ অক্টোবর আবারো চতুর্থ শ্রেণী পদে ১ জন কর্মচারী নিয়োগ দিতে গোপনে বিজ্ঞাপন দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য কোন সভা কিংবা রেজুলেশন করা হয়নি বলে জানা গেছে। সেই সাথে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের নামে পঞ্চগড় জেলা পরিষদ থেকে দুই দফায় আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ নেয়া হলেও সেই টাকায় ৫ ফিট উচ্চতার মাত্র ১০০ ফিটের একটি সীমানা প্রাচীর তৈরী করা হয়েছে। এখানেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ের একাডেমীক ভবনের আকৃতি পরিবর্তন করে নিজের প্রয়োজনে ও শিক্ষকদের জন্য তৈরী করেছেন দুইটি বাথরুম। এখানেও বরাদ্দের পুরো টাকা খরচ না করেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিপেন চন্দ্র রায় লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার পরিচয় দিয়ে বিদ্যালয়ে নিজের খেয়াল খুশিমত আসার যাওয়া ও ছুটি ছাড়াই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়টির সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কালীপদ রায় বলেন, যে অভিযোগটি করা হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে তা সত্য। বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, কর্মচারী প্যাটার্ন পূরণের পরও গোপনে আরও একটি পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যেন কোন জবাবদিহিতা নেই। বিদ্যালয়টিতে আগেও তুলনায় কমেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মানও। সব কিছুই যেন হযবরল অবস্থায় চলছে।
বিদ্যালয়টির দাতা সদস্য মুহুনী রায় বলেন, বিদ্যালয়ের বিষয়ে যে অভিযোগটি হয়েছে তা সত্য। আমি দাতা সদস্য অথচ আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে নতুন একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরে দুইটি নিয়োগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ২০ লাখ টাকা , সীমানা প্রাচীরের টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যালয়টির সভাপতি সত্যেন্দ্রনাথ রায় বলেন, আসলে অনেকে তো অনেক অভিযোগই করে। নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ের গোপন কিছু থাকে। সব তো আর বলা যায় না। তাছাড়া কর্মচারী প্যার্টানের বাইরে তো আমরা যেতে পারবোনা।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিপেন চন্দ্র রায় বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে শুনেছি। আর টাকা লেনদেন হয়েছে এটা ওরা প্রমাণ করুক। মুলত ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এসব করছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল মালেক বলেন, আমি তো নতুন এসেছি। সব স্কুলের নাম এখনো জানিনা। ওই স্কুলে যদি কর্মচারী প্যাটার্ন পূরণ হয়ে যায় তাহলে তো আর নিয়োগ দিতে পারবেনা। আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।