শাহজাহান শাজু, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
নিয়ামতপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে সৌরভ হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের ঝাঝিরা গ্রামের বাসিন্দা নফর উদ্দীনের ছেলে। গত কয়েকদিন থেকে তিনি সর্দিজ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। বুধবার দুপুরে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। সরকারী স্বাস্থ্য বিধি মেনে তার দাফন কার্যক্রম চলছিলো।
এদিকে, নিয়ামতপুরে করোনা সংক্রমণের হার প্রতি দিনই বেড়ে চলেছে। প্রথম ঢেউ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত করোনার স্যাস্পল সংগ্রহ করা হয়েছে ১০৭০ জনের। এর মধ্যে ১৬৭ জনের ফলাফল পজেটিভ ছিল। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই উপজেলায় সর্বশেষ সংগৃহীত ১৬৮ টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২০ মে থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ৩৭ শতাংশ বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন।
করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে নিয়ামতপুর উপজেলায় এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া নিয়ামতপুরের পার্শ্ববর্তী সাপাহার, পোরশা ও মান্দা উপজেলায় বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ।
বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রেস ব্রিফিংয়ে নিয়ামতপুরের সর্বাতœক লকডাউনের ঘোষণা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়া মারীয়া পেরেরা। এ সময় প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন, ওসি হুমায়ুন কবীর, প্রমূখ।
ইউএনও বলেন, সম্প্রতি নিয়ামতপুরে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী হার লক্ষ করা যাচ্ছে। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে করোনা সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের উপরে। জেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলা নিয়ামতপুরে গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনার সংক্রমণের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া জেলার সাপাহার, পোরশা ও মান্দা উপজেলায় সংক্রমণ পরিস্থিতি উর্ধ্বমুখী। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাক্রমে আজ (বুধবার) দিবাগত রাত ১২টা থেকে লকডাউন দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, জনগণকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সাত দিনের জন্য নিয়ামতপুর উপজেলা জুড়ে লকডাউন কার্যকর করা হবে।
লকডাউনের সময় সব দোকানপাট ও যানচলাচল বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট থেকে কোনো যানবাহন নওগাঁয় প্রবেশ করতে পারবে না, নওগাঁ থেকেও কোনো যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না। রোগী ও অন্য জরুরি সেবাদানকারীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না।
নওগাঁ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া করোনা রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরের পর থেকে নওগাঁয় করোনা সংক্রমণের হার উর্ধ্বমুখী। গত ২০ মে থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৫৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনা শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। জেলার মধ্যে নওগাঁ পৌরসভা এলাকা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় সংক্রমণ পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। গত ২০ মে থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত এসব এলাকায় ২৭৮ টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
নওগাঁয় গত বছরের ১৩ মে প্রথম একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সেই সময় থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪৫০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ২৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই হিসাবে জেলায় এ পর্যন্ত সংক্রমণের হার ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।
নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘নিয়ামতপুরে ঈদুল ফিতরের পর সংক্রণের হার উর্ধ্বমুখী। এটা বেশ উদ্বেগের। এই অবস্থায় আমরা অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। মানুষকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের উদ্যোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’