নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট, ৩৬ লাখ টাকা নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ

নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট, ৩৬ লাখ টাকা নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ

শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নের দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চলা বিদ্যালয়ে এসকল শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক ও কর্মচারির সংখ্যা রয়েছে ১৫ জন। যার মধ্যে শিক্ষক ৯জন ও কর্মচারী রয়েছে ৬ জন। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পরে ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়। সম্প্রতি শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ৩৬ লাখ টাকা নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান পরিচালিত হলেও বিদ্যালয় উন্নয়ন কল্পে কোন কাজই হয়নি৷ বরং নিয়োগ বানিজ্যের সবগুলো টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

স্থানীয় ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ অধিকাংশ শিক্ষকই স্থানীয় সামাজিক রাজনীতি ও ঝামেলার সঙ্গে জড়িত। এর আগে বিদ্যালয়ে কর্মচারি নিয়োগে ৩৬ লাখ টাকার নিয়োগ বানিজ্য হয়েছে। যার একটি টাকাও বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়নি। অভিভাবকেরা নিয়োগ বানিজ্য ও স্থানীয় ঝামেলার কারণে এলাকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চায় না। আবার যারা ভর্তি হয় তাদের উপস্থিতির সংখ্যাটাও কম থাকে। এ সমস্যা সমাধান করে ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করার দাবি তাদের। পাশাপাশি শিক্ষকদের গাফিলতিকেও দায়ি করছেন অনেকেই।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন ছাত্রী ও ৬ জন ছাত্র। সপ্তম শ্রেণিতে ১৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন ছাত্রী ও ৯ জন ছাত্র। অষ্টম শ্রেণিতে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জন ছাত্রী ও ১৮ জন ছাত্র। নবম শ্রেণিতে ৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ জন ছাত্রী ও ৬ জন ছাত্র এবং দশম শ্রেণিতে ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জন ছাত্রী ও ৭ জন ছাত্র রয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত থাকে। বছরের পর বছর এমপিও নীতিমালা না মেনে এবং কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও পাঠদান যথা সময়ে হয় না। প্রায় দিনই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়। শিক্ষকরাই ঠিকমতো স্কুলে আসে না। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ শিক্ষক ও কর্মচারি। যার কারণে অধিকাংশ অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। আসলে এভাবে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষক এবং কর্মচারীরা ঠিকই সরকারি বেতন নিচ্ছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরাপদ বারুরী জানান, বিদ্যালয় টেস্ট পরীক্ষা চলছে এ কারণে পরীক্ষা শেষে ছুটি দেওয়া হয়। এক সময় বাইরের গ্রামের শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে ভর্তি হত। আশেপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের এখানে শিক্ষার্থী কমে গেছে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক ঝামেলার কথা স্বীকার করে বলেন প্রধান শিক্ষক পদে তার নিয়োগের পর থেকেই একটি মহল বিরোধীতা করে গ্রামের ছেলেমেয়েদেরকে অন্য স্কুলে নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করার। তিনি সে সময় নিয়োগ প্রার্থী থাকায় নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না বলেও জানান।

দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি রুপন ঘোষ জানান, আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে  শিক্ষক ও কর্মচারী ৫ টি নিয়োগ হয়েছিল। তবে আমি নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে কোন কিছুই জানিনা। এবং আমি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ানো এবং এ সমস্যা সমাধানে বিষয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সাথে বেশ কয়েকবার মতবিনিময় করেছিলাম।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল গণি জানান, এমপিওভূক্তির আগে বিষয়গুলো দেখা হয়। কিন্তু পরে আর কিছুই করার থাকে না। আমরা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী বাড়ানোর বিষয় কথা বলতে পারি। এবিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে এবং সমস্যা সমাধানে আলোচনার বিষয় রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রাখী ব্যানার্জী জানান, দোরাননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Explore More Districts