নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য সব জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সফরে এসে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত চারুকলা ইনস্টিটিউট ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহবান জানান। এর আগে মন্ত্রী নগর ভবনে আয়োজিত নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং সিটি করপোরেশনের চলমান প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা করেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ একটি সম্ভাবনাময় শহর। মেয়র-কাউন্সিলরবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা নগরবাসীকে সাথে নিয়ে এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। এই শহর যেন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে না উঠে সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সাধারণ নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। কোনোভাবেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। কে, কার লোক এসব বিবেচনায় না নিয়ে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। কেউ যদি জননিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ মানে উন্নয়ন, আওয়ামী লীগ সামনে এগিয়ে যাওয়া। শেখ হাসিনা কোনো অন্যায় ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। যারা ইসলামকে ব্যবহার করে অপরাজনীতি করতে চায়, মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেননি। আজকের বাংলাদেশ হতদরিদ্রের দেশ নয়। মিসকিনের জাতি নয়। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি দেন তা বাস্তবায়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলেন বিএনপি তা বন্ধ করে দিয়েছিল। পুনরায় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে কমিনিউটি ক্লিনিক চালু করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন আপনারা সবাই দেখেছেন করোনাকালীন এই ক্লিনিক সাধারণ মানুষ কি সেবা দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন ও অবহিত হয়ে মন্ত্রী সকলের উদ্দেশ্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষ চিনতে ভুল করেন না। তিনি যোগ্য মানুষের হাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়ন এবং মানুষের ভাগ্য তুলে দিয়েছেন এবং মেয়র সেই প্রতিদান ও আস্থার প্রমাণ দিচ্ছেন।
এর আগে, নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয়। জনগণ তখনই সরকারকে রাজস্ব দিবে যখন তার সক্ষমতা তৈরি হবে। আর সেই সক্ষমতা তৈরির কাজটি করতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। দেশ এগিয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রাপ্য নাগরিক সেবা প্রদান করলে জনগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজস্ব দিবে। কিন্তু এটা না করে তাদের প্রতি অন্যায়-অবিচার করে সমাজে দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করলে মানুষ পাশে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।
জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, কৃষি-শ্রমিক, রিক্সাচালক, দিনমজুর সবাই এ দেশের নাগরিক। দেশের উন্নয়নের জন্য সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। দেশ উন্নত হলে এর সুফল আমরা এবং আমাদের আগামী প্রজন্ম ভোগ করবে। সেবা গ্রহীতাদের কোনো ভাবেই হয়রানি করা যাবে না। যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে থাকার জন্য জনপ্রতিনিধিদের পাশে থাকার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
সভায় মেয়র ও কাউন্সিলরগণ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার সম্প্রসারণ এবং মেট্রোপলিটন করার দাবি জানালে শহরের উন্নয়ন এবং নাগরিকদের সেবা বৃদ্ধির স্বার্থে যদি সিটি কর্পোরেশন এলাকার সম্প্রসারণ করা যৌক্তিক হয় তাহলে তা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এই এলাকায় পানি সমস্যা সমাধানে ওয়াসা প্রতিষ্ঠা করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং কাউন্সিলরগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ডি- এইচএ