নরসিংদীর মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন আব্দুল মান্নান ভূইয়া

নরসিংদীর মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন আব্দুল মান্নান ভূইয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:-বিএনপির সাবেক মহাসচিব,সাবেক মন্ত্রী,নরসিংদীর মাটি ও মানুষের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা আবদুল মান্নান ভূঁইয়া




জানা যায়, ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের আসাদনগর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। তার পৈতৃক বাড়ি শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর গ্রামে। ১৯৬১ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে স্নাতক ও ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। 




ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়ান। ১৯৬০ সালে মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদে সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তী দুই বছর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। 




১৯৬৪-৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবন শেষে মান্নান ভূঁইয়া মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ এ যোগ দেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন।




১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নরসিংদীর শিবপুরসহ বিশাল এলাকা জুড়ে তিনি মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি ওই অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন। ন্যাপ ছেড়ে মান্নান ভূঁইয়া ১৯৭৮ সালে ইউনাইটেড পিপলস পার্টিতে (ইউপিপি) যোগ দিয়ে  সাধারণ সম্পাদক হন। 





কয়েক বছর তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অণুরোধে ১৯৮০ সালে মান্নান ভূঁইয়া বিএনপিতে যোগ দেন। জিয়া তাকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আহবায়ক মনোনীত করেন। ১৯৮৮ সালে থেকে মান্নান ভূঁইয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন টানা সাড়ে ৮ বছর, পরে ৯৬ সালের ২৬ জুন খালেদা জিয়া তাকে দলের মহাসচিব মনোনীত করেন। 





টানা ১১ বছর মান্নান ভূঁইয়া বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। ২০০৭ সালের এক-এগারো পরবর্তী সময় দলে সংস্কার প্রস্তাব আনলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তাকে বহিস্কার করেন।





মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসন থেকে চারবার সাংসদ নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের শ্রম ও জনশক্তি এবং পরবর্তী সময়ে কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ছিলেন তিনি।




মান্নান ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এ জন্য তিনি দুই দফা সিঙ্গাপুর গিয়ে চিকিৎসা নেন। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ৭ জুলাই ২০১০ সালে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। ২৮ জুলাই ২০১০ তারিখে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।





Explore More Districts