লাইফস্টাইল ডেস্ক
‘আবার এলো রে বৈশাখী মেলা বাঙালির প্রাণের উৎসব তাই,
ছেলে বুড়ো ছুটছে সবাই দেখ কেউ যেন আর বাদ নাই’
বছর ঘুরে আবার আসছে বৈশাখ মাস, নানা উৎসব আর মেলার আয়োজনে কেটে যাবে মাসটি। এই একটা সময় যখন বাঙালিরা মেতে ওঠে নানা আয়োজনে। ছুটে চলে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত প্রাণের টানে। আনন্দ আয়োজন তো থাকেই, সাথে সূর্যের উত্তাপটাও যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তবুও কি ঠেকানো যায় মানুষকে, গরম বলে কি মেলায় যাবে না?
বড়রা না হয় সহ্য করতে পারে, কিন্তু ছোটরা? কোলের বাবুটাকে কি করে নিয়ে যাবেন মেলায়? অনেকেই এ সময় সমস্যায় পড়েন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে। এত গরমে মেলায় নিয়ে যাব নাকি যাব না দ্বিধায় ভুগতে থাকেন। নিয়ে গেলেও কী কী করতে পারি সোনামনিটাকে ভালো রাখতে? কোন সমস্যায় পড়লে কি করব? এত সব প্রশ্নের কিছু সহজ সমাধান নিয়ে সারাবাংলার পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. লুনা পারভীন।
প্রচন্ড গরমে ছোট শিশুকে ঘরের বাইরে না নেওয়াই ভাল, কারণ ওরাই সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকে পানিশূন্যতা থেকে শুরু করে ত্বকের নানান সমস্যায়! তারপরও যদি একান্ত নিতেই হয় তবে কিছু সাবধানতা পালন করতে হবে। যেমন, বাচ্চার জামাকাপড় যেন পাতলা সুতি কাপড়ের ও হালকা রঙের হয়। এতে গরম কম লাগবে এবং সূতি কাপড় সহজে ঘাম শুষে নেয় বলে, গায়ে ঘাম জমে ঠান্ডা লাগা বা চামড়ায় ক্ষত বা ঘামাচি হতে পারবে না। এছাড়া ছাতা, রোদচশমা, সানস্ক্রীন লোশন অবশ্যই ব্যবহার করবেন!
অবশ্যই সাথে পর্যাপ্ত পানি রাখবেন। একটু পর পর বাচ্চার গা মুছে ঠান্ডা করে দেবেন ও পানি পান করাবেন। এতে পানিশূন্যতা থেকে শিশু যেমন বাঁচবে, তেমন অতিরিক্ত ঘাম হওয়াও ঠেকাবে। পানির পাশাপাশি খাবার হিসেবে ঘরে তৈরি তরল কিছু, যেমন পাতলা করে খিচুড়ি, পায়েস, নরম করে নুডলস, লেবুর শরবতও সাথে রাখবেন। এতে বাইরের খাবার থেকে জীবাণুর সংক্রমণ, ডায়রিয়া হওয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।
টানা অনেকক্ষণ বাইরে থাকলে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে টয়লেট সংকট। প্রস্রাব কিংবা পায়খানা চেপে রাখলে পরবর্তীতে প্রস্রাবে সংক্রমন, পেট ফাঁপা, বাচ্চা অস্থিরতার শিকার হতে পারে। এজন্য ছোট বাচ্চাকে ডায়াপার পরিয়ে নিতে পারেন। তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন মেলাতে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়, কোথাও গেলে খোঁজখবর নিয়ে যাবেন আগে থেকেই।
ধূলোবালি, গরমে বাচ্চার যেমন হাঁচিকাশি হতে পারে তেমনি জনাকীর্ণ স্থানে অন্যের হাঁচিকাশিতেও সংক্রমন ব্যাধির জীবাণু থাকতে পারে। তাই সতর্কতা হিসেবে বাচ্চাকে মাস্ক পরিয়ে নিতে পারেন বা মুখ-হাত ভেজা কাপড় দিয়ে বারবার মুছে দিতে পারেন।
এর বাইরেও কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
অতি উৎসাহে বাচ্চাকে পান্তা ইলিশ, বাইরের চটপটি, আচার খাওয়াবেন না। অতিরিক্ত গরমের অজুহাতে ঠান্ডা আইসক্রিম বা বাইরের শরবত খাওয়াবেন না। হঠাৎ গরমে ঠান্ডা খাওয়ালে বাইরের সাথে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রার এই তারতম্যে বাচ্চারা চট করে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়।
বাচ্চাকে উচ্চস্বর শব্দ, গানবাজনা থেকে দূরে রাখবেন। বাচ্চার কানের উপর চাপ পড়তে পারে। তাছাড়া শিশুরা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি, অস্থিরতা প্রকাশ করতে পারে। যে বাচ্চা হাঁটতে পারে তাকে হাতছাড়া করবেন না মোটেও। এরকম ভিড়েই চট করে বাচ্চা হারিয়ে যেতে পারে।
কোন কারণে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে, বমি করলে বা জ্বর চলে আসলে ঘাবড়ে যাবেন না! বাচ্চার জামা কাপড় খুলে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছিয়ে দেবেন। খোলামেলা ছায়াযুক্ত জায়গায় নিয়ে বাতাস করতে পারেন পাখা দিয়ে। স্প্রাইট বা সেভেনআপ জাতীয় রংহীন পানীয়র ভেতরের গ্যাসটা বের করে (বোতলের মুখ খুলে ১৫-২০ মিনিট রাখলেই হয়) দিয়ে একটু একটু করে পাঁচ-দশ মিনিট পর পর খেতে দিলে বমি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ব্যাগে জ্বর, বমির ওষুধ, স্যালাইন ইত্যাদি আগেই সাথে নিয়ে রাখতে পারেন সাবধানতার জন্য।
এরপরও যে কোন সমস্যায় প্রয়োজন মনে করলে নিকটস্থ হাসপাতালে বাচ্চাকে নিয়ে যেতে পারেন। ছুটির দিনেও ডাক্তার পাবেন ইমার্জেন্সি সেবার জন্য।
উপরের লেখা পড়ে আবার ভাবতে শুরু করবনে না যে, এত ঝামেলা করে কেউ বাচ্চাকে বাইরে নেওয়ার জন্য? চোখ কপালে তুললে বা বিরক্ত হলে চলবে না। বাচ্চাটা তো আপনার, আমার, দেশের ভবিষ্যৎ! এদেরকে নিয়ে হেলাফেলা করতে আছে? বাঙালি ঐতিহ্যের একটা দিন শিশুকে দেখাতে করলেনই না হয় একটু কষ্ট।
হবে না বৃথা এ সাবধানতা,
সময় হবে না নষ্ট।
ভালো থাকুক প্রতিটি শিশু
জানাই অগ্রিম শুভ নববর্ষ!
সারাবাংলা/এসবিডিই