বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জে ধান কেনার আনুষ্ঠানিকতা হলেও উদ্বোধনী দিনের প্রয়োজনে ১৮ টন ধান কেনার পর আর কোন ধান কেনা হয় নি এখানে। সোমবার জেলার সবচেয়ে বড় মল্লিকপুর খাদ্য গোদামে দুই ঘণ্টা অবস্থান করে ধান কেনা কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে মিলারদের সরবরাহ করা চালের একাধিক ট্রাক আনলোড হতে দেখা গেছে। খাদ্য কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, দ্রুতই ধান কেনাও শুরু হবে।
সুনামগঞ্জে এবার প্রায় পৌঁনে চার লাখ কৃষক ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন ধান উৎপাদন করেছেন। ধানের এই বাম্পার ফলনেও ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক। সরকার ধানের দাম প্রতিমণ ১২শ’ টাকা নির্ধারণ করলেও জেলার কোথাও এক হাজার টাকার বেশি ধান বিক্রয় হচ্ছে না। অন্যদিকে, খাদ্যমন্ত্রী রবিবার ধান কেনা উদ্বোধন করলেও সোমবার জেলার কোথাও এক ছটাক ধানও কেনা হয় নি। কৃষকদের অনেকে গোদামে কবে কীভাবে ধান নেওয়া হবে এই তথ্যও জানেন না। কেউ বা হয়রানির কথা চিন্তা করে গোদামে ধান দিতে চাচ্ছেন না।
মল্লিকপুর খাদ্য গোদামের পাশের গ্রাম কালীপুরের কৃষক আব্দুল জলিল ও মানিক মিয়া বললেন, সরকার ১২শ টাকা ধানের দাম নির্ধারণ করার পরপরই বাজার কিছুটা উঠে গেছে। ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে ধানের দাম। ধান যত দ্রুত সরকারি খাদ্য গোদাম কিনবে, ধানের দামও তত বাড়তে থাকবে।
কালীপুরের পাশের ঝাওয়ার হাওরে খড় শুকানের কাজে ব্যস্ত থাকা কৃষক মো. সাদির হোসেন বললেন, ‘আমি গোদামে ধান দেই না। ওখানে ২৭ মণ (এক টন) ধান দিতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়, ধান শুকায়নি-চিটা আছে সহ নানা কথা বলে গোদাম কর্মকর্তারা। এজন্য ৯৫০ টাকা মণ দরেই গোদামের পাশের মিলে দেড়শ মণ ধান বিক্রি করেছি আমি।
গোদামের পাশের রাসেল অটো রাইস মিলের মালিক রাসেল আহমদ বললেন, কৃষকরা একসঙ্গে ধান বিক্রয় করেন না। এজন্য ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারাও বেশিরভাগ ধান কিনেন। দফায় দফায় কেনা বেচা হওয়ায় কৃষকরা দাম কম পান বলে মন্তব্য তার।
ধান কেনায় বিলম্ব, অথচ মিলারের চাল কেনা হচ্ছে দ্রুত গতিতে, এটি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত গোদাম কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বললেন, সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ধান কেনা শুরু হবে। কৃষকের তালিকা করতে বিলম্ব হচ্ছে।
সদর উপজেলা খাদ্য গোদাম কর্মকর্তা বেনু গোপাল দাস জানালেন, জেলায় ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান কেনা হবে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাসহ পাঁচ উপজেলায় অনলাইনে এবং ছয় উপজেলায় সনাতন পদ্ধতিইে হবে ধান কেনা। চাল কেনা হবে নয় হাজার ৬৭৬ টন। তিনি জানালেন, সদর উপজেলায় সোমবার মাত্র ১৩ জন কৃষক কৃষি অ্যাপে ধান কেনার জন্য আবেদন করেছেন।
জেলার বিশ^ম্ভর উপজেলায় ধান কেনা হবে সনাতন পদ্ধতিতে। ওখানকার সরকারি গোদামে ধান বিক্রয় করতে আগ্রহী ১৪০৮ কৃষকের নামের তালিকা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া। নয়ন মিয়া জানালেন, লটারী করে ক্রয় তালিকা করবেন উপজেলা ধান ক্রয় কমিটি।
এই উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা মো. ফয়জুল হক জানালেন, ধান ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে লটারী হবে, এরপর শুরু হবে ধান কেনা।
ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি মো. সাদিউর রহিম জাদিদ বললেন, মঙ্গলবার ক্রয় কমিটির সভা হবে। ওইদিনই লটারী দিয়ে ধান কেনা শুরু হবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম ভূঞা বললেন, কৃষক তালিকা সংগ্রহ করে উপজেলায় উপজেলায় ক্রয় কমিটির সভা করে দ্রুতই কেনা হবে ধান। ধান কিনতে লটারী করতে হচ্ছে, এজন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে। মন্ত্রীর উদ্ধোধনের সময় যেগুলো কেনা হয়েছে, সেগুলো লটারীতে ঢুকানো হবে।
