ধলেশ্বরীর জলে বাসা বেঁধেছে সাকার ফিস

ধলেশ্বরীর জলে বাসা বেঁধেছে সাকার ফিস

 

মোহাম্মদ সেলিম
সাকার ফিস ধলেশ্বরী নদীর জলের মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালের আশাপাশে বাসা বেঁধেছে। এখানে সারাক্ষণই জলেতে সাকার ফিস ফুরন কাটছে। তাতে জলেতে জলরাশির বুদবুদ ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। ঘাটের ময়লা জলে সাকার ফিস উপরে উঠছে আবার নিচে নেমে যাচ্ছে। আগে অনেকেই এখান থেকে এগুলো ধরে নিয়ে খেতো বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এখন আর কেউ ধরে নিয়ে যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

এই মাছের আসল নাম হচ্ছে সাকার মাউথ ক্যাটফিস। তবে সাকার ফিশ নামেই এটির সবখানেতেই বেশি পরিচিতি রয়েছে। এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। বিদেশি প্রজাতির এই মাছটি অ্যাকুরিয়ামে রাখা হয়ে থাকে।

সাকার ফিস মাছ মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রধান বাজারে মাঝেমধ্যে দেখা যায়।
সাকার ফিস মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর বেশিরভাগ এলাকায় এখন ছড়িয়ে পড়েছে। সাকার ফিস ধলেশ্বরী নদীর দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছ খেয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ফলে এই নদীর চিংড়ি, কালি বাউস,

মাগুর ও শিং মাছসহ ছোট শামুক জাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে ফেলার কারণে এটি এখান থেকে বিলুপ্তির পথে ধাবিত হচ্ছে।

একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে, সাকার ফিসটি ২০০১ বা ২০০২ সালের দিকে ইউরোপের এক কূটনীতিক মেয়াদ শেষে চলে যাওয়া আগে ঢাকার গুলশান লেকে ছেড়ে দেন। এরপর সেখান থেকেই দেশের ধলেশ্বরী নদীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

সাকার ফিস ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয় বলে জানা গেছে। সাকার ফিস পানি ছাড়া প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। সাকার ফিসকে কেউ কেউ কৈ মাছের প্রাণ বলে আখ্যা দিচ্ছে।
এদিকে মৎস্য আইন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্ষতি সাধন করে, এমন যেকোনো বিদেশি মাছ আমদানি ও চাষ দণ্ডনীয় অপরাধ।

অ্যাকুরিয়ামের শোভাবর্ধক সাকার ফিস ধলেশ্বরী নদীতে চলাচলে মারমুখি রূপ ধারণ করেছে। তাতে তাদের দ্রুত বংশবিস্তার ও প্রচুর খাদ্য গ্রহণের কারণে ধলেশ্বরী নদীতে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানা গেছে।

এর ফলে ধলেশ্বরী নদীতে এখন দেশিয় মাছ তেমনটা পাচ্ছে না অনেকে। এক সময়ে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের আশপাশে অনেক বড়শি দিয়ে বিকেলের দিকে নানা রকমের দেশিয় মাছ ধরতো। এছাড়া অনেকে এর আশপাশে জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে।

কিন্তু এখন সাকার ফিসের কারণে এখানে সেই আগের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। দ্রুত বংশ বিস্তারকারী সাকার ফিস কীভাবে ধলেশ্বরী নদীতে এসে পৌচ্ছে তার কোন সঠিক তথ্য জানে না কেউ।

সাকার ফিস অ্যাকুরিয়ামের ময়লা পরিস্কার করায় সবচেয়ে ভুমিকা পালন করে থাকে। অ্যাকুরিয়ামের পাথরের ওপরে শ্যেওলা ও অন্য মাছের ডিম খেয়ে বেঁচে থাকে বলে জানা গেছে।

মুন্সীগঞ্জ শহরের মাছ বাজারে নাম প্রকাশ না করা সত্বে মাছ ব্যবসায়িরা বলেন, এখানে অনেকে সাকার ফিস বিক্রি করে। তবে তারা জানেন না এ মাছ অ্যাকুরিয়ামের মাছ। এ মাছ ধ্বংস করা নিয়ম রয়েছে, সেই বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।

মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালের ইজারাদার মোঃ দীল মোহাম্মদ কোম্পানি জানান, এ ঘাট থেকে আশপাশের মাদ্রাসার লোকজন সাকার ফিস ধরে নিয়ে যেতে দেখেছেন ইতোপূর্বে। তবে এখন আর কেউ এগুলো এখান থেকে ধরতে আসছে না।

মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শামসুল করীম বলেন, সাকার ফিস দেশিয় মাছের জন্য হুমকি স্বরূপ। এসব মাছ যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে এগুলোকে ধ্বংস করার নির্দেশ রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের ধলেশ্বরী নদীতে ও মুন্সীগঞ্জ শহরের মাছের বাজারে সাকার ফিস বিক্রির বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে তার তেমনটা জানা নেই।

তাকে এ বিষয়ে কেউ কখনো কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে তিনি এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে প্রথম জানলেন। তাই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

Explore More Districts