দূরত্বে দুই মেরুতে এমপি-চেয়ারম্যান

দূরত্বে দুই মেরুতে এমপি-চেয়ারম্যান

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে বর্তমান এমপি ড. জয়া সেন গুপ্তার সঙ্গে তাঁর সবচাইতে ঘনিষ্টজন শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরীর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। গেল তিন মাস হয় এই দূরত্ব অনেকটা প্রকাশ্য দেখা দেওয়ায়, বিষয়টি নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে এখন অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়েছে। এমপি জয়া সেনের কোন কর্মসূচীতে এখন আর থাকছেন না আলামিন চৌধুরী। রবিবার দিরাই-শাল্লার সবচয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প মদনপুর-দিরাই-শাল্লার ৬২৮ কোটি টাকার সড়কের কাজ উদ্বোধনের সময়ও অনুপস্থিত ছিলেন শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরী। জয়া সেন ও আলামিন দুজনেই দূরত্বের কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘দেখি কী হয়, কথা বলবো।’
দিরাই-শাল্লা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জাতীয় নেতা (ড. জয়া সেন গুপ্তার স্বামী) সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের হাত ধরেই শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন আলামিন চৌধুরী। শাল্লা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস এক সময় সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের ঘনিষ্ট রাজনীতিক ছিলেন। শাল্লায় স্থানীয় এমপি’র হয়ে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতেন তিনিই।
২০১৩ সালে স্থানীয় নানা ইস্যুতে অবনীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় সুরঞ্জিতের। ওই সময় অবনীর স্থলাভিসিক্ত হন আলামিন চৌধুরী। সুরঞ্জিতের ইশরায় শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন প্রয়াত মহিম চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক হন আলামিন চৌধুরী। পরে শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আলামিন চৌধুরীকে প্রকাশ্য সমর্থন দেন সুরঞ্জিত। নির্বাচনে পরাজিত হন অবনী মোহন দাস।
এরপর থেকে শাল্লায় এমপি সুরঞ্জিতের হয়ে সকল উন্নয়ন কাজ, সরকারি সহায়তা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচী দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন আলামিন চৌধুরী।
২০১৭ সালের পাঁচ ফেব্রুয়ারি সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুর পর দিরাই-শাল্লার উপ-নির্বাচনে তার স্ত্রী জয়া সেন গুপ্তা এমপি হন। জয়া সেনকে কাকীমা সম্বোধন করেন আলামিন। এমপি নির্বাচিত হবার পর শাল্লার রাজনীতিতে সুরঞ্জিতের দেখানো পথেই হাঁটেন জয়া সেন। শাল্লায় তাঁর (জয়া সেন) অনুপস্থিতে সকল দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আলামিন চৌধুরী।
আলামিন চৌধুরী সম্প্রতি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবার আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করলে, জয়া-আলামিনের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে।
গত ১৬ মার্চ জয়া সেন গুপ্তা শাল্লা উপজেলা সদরের ডাক বাংলোয় স্থানীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে টিআর, কাবিখা, টিউবওয়েলসহ এমপি’র বিভিন্ন বরাদ্দের বন্ঠন নিয়ে ওখানকার কর্মীদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া আলামিন চৌধুরী’র বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন এমপি জয়া সেন। এক পর্যায়ে আলামিন চৌধুরী জয়া সেনকে সকলের উপস্থিতিতেই, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবার আকাঙ্খার কথা জানিয়ে বলেন, ‘অনেকেই গণসংযোগে নেমেছে, আপনি (জয়া সেন) অনুমতি দিলে আমিও হাঁটতে চাই।’ এরপর থেকেই দুজনের দূরত্ব শুরু হয়।
শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়া বলেন, গেল ১৬ মার্চ শাল্লা ডাকবাংলোয় এমপি জয়া সেনের উপস্থিতিতেই আমরা বলেছি, সরকারের এবং এমপি’র বরাদ্দের কোন কিছুই এখানে আওয়ামী লীগের কর্মীদের কোন উপকারে আসে নি। বিএনপি-জামায়াতের উপকার হয়েছে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাল্লার এই কর্মী সভার পর গেল প্রায় আড়াই মাস জয়া সেন ও আলামিন চৌধুরীর মধ্যে কোন কথা বার্তাই হয়নি।
গেল বুধবার (২৪ মে) শাল্লার কর্মীদের নিয়ে জয়া সেন গুপ্তার দিরাইয়ের বাসভবনে সভা করেন তিনি। এই সভায় শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন চৌধুরী অনুপস্থিত ছিলেন। রবিবার দিরাই-শাল্লার সবচয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প মদনপুর-দিরাই-শাল্লা’র ৬২৮ কোটি টাকার সড়কের কাজ উদ্বোধনের সময়ও অনুপস্থিত ছিলেন শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরী।
জয়া সেনের উপস্থিতিতে বিভিন্ন কর্মসূচীতে অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে আলামিন চৌধুরী বললেন, জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণের আকাঙ্খা নিয়ে গণসংযোগে নেমেছি ‘জয়া কাকিমা’র অনুমতি নিয়েই। দিরাইয়ে শাল্লার কর্মীদের সভার আগে তাকে (জয়া সেনকে) ভুল বুঝানো হয়েছে। ওখানে আমাকে ডাকাই হয় নি। তাকে উত্তেজিত করিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলানো হয়েছে। আমি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামিনি, বিরুদ্ধাচরণও করি নি। আমি তাঁকে কাকিমা ডাকি, শ্রদ্ধা করি, করবোও। নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার কোন সুযোগ নেই আমার। আমাকে দিরাইয়ের সভায় দিরাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় আমন্ত্রণই জানাননি। আমি শীঘ্রই তাঁর সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলবো।
দিরাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় এই প্রসঙ্গে বললেন, আলামিন চৌধুরী দলের নির্বাচিত কমিটিকে পাস কাটিয়ে দিরাইয়ে দলে বহিস্কৃত, বিদ্রোহীদের নিয়ে সভা করেন, গণসংযোগ করেন। ওই সভায় এমপির বিরুদ্ধে বিষোদগারও হয়। এসব করার পর এমপি’র সভায় কীভাবে আমরা আলামিন চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানাই।
দিরাইয়ে আলামিন চৌধুরীর গণসংযোগ ও সভা প্রসঙ্গে দিরাই উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রঞ্জন রায় বললেন, প্রদীপ রায়ের সঙ্গে না বসলেই আওয়ামী লীগের সভায় ডাকা হয় না, আলামিন চৌধুরীর ক্ষেত্রেও এটি করা হয়েছে।
নিজের ঘনিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব প্রসঙ্গে জয়া সেন বললেন, আলামিন আমার সন্তানতুল্য, আমার স্বামীকে বহুবছর সহায়তা করেছে সে। আমাকেও সহায়তা করেছে। আমরা পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ট। কিছুদিন হয় পরস্পরে দূরত্বে আছি, দেখি কী হয়।

Explore More Districts