দুই কোটি টাকার লোহা লক্কর গোপনে বিক্রি দেয়ার অভিযোগ সরকারি কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে – Daily Gazipur Online

দুই কোটি টাকার লোহা লক্কর গোপনে বিক্রি দেয়ার অভিযোগ সরকারি কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে – Daily Gazipur Online

অলিদুর রহমান অলি: উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে টঙ্গীতে সরকারি অডিটোরিয়াম ভেঙ্গে প্রায় দুই কোটি টাকার লোহা-লক্কর গোপনে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে টঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ভেঙ্গে প্রায় ২০০ টন পরিমাণের রড, এ্যাংগেল, ফ্লাটবার, টিনসিট, বৈদ্যুতিক তার, দরজা, জানালা, গ্রিল, দর্শকসারির লোহার চেয়ার, ইট, বিভিন্ন ডেকোরেশন ও নির্মাণ সরঞ্জামাদিসহ সকল মালামাল বিনা টেন্ডারে রাতের আঁধারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় চলছে। গুরুতর এ দুর্নীতির দায় থেকে রক্ষা পেতে অভিযুক্ত শিক্ষকরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর ঘটনার দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম পাটকল নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলস্ বিগত ২০০২ সালে বিপুপ্ত হওয়ার পর মিলটির ১নং ইউনিট রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে পরিণত করে ২ নং ইউনিটকে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু মিলটির টঙ্গীতে প্রায় সোয়া ৩ একর সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলেও এটি রক্ষায় কোন উদ্যোগ নেয়নি বিজেএমসি কিংবা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। অপরদিকে ৯০ দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ জুটমিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) এর টঙ্গী নিশাত জুট মিলসও হা-মীম শিল্প গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে দেয় তৎকালীন সরকারের বিরাষ্ট্রীয়করণ কর্তৃপক্ষ প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড। নিশাত জুট মিলস হস্তান্তরের পর বিজেএমসি টঙ্গী থেকে বিদায় নেয়। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে আদমজীর টঙ্গী কলেজ গেট এলাকার মূল্যবান এ সম্পত্তি। যদিও আদমজীর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত ‘টঙ্গী পৌর অডিটোরিয়াম’ ও ‘টঙ্গী পাঠাগার’ অধুনালুপ্ত টঙ্গী পৌর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করতো। এ অডিটোরিয়ামে এক সময় অভিজাত শ্রেণির বিবাহ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হতো। আদমজী মিলস বিলুপ্ত হওয়ার পর টঙ্গী অডিটরিয়াম ও পাঠাগারসহ আদমজীর প্রায় সোয়া তিন একর জমির মালিকানা লাভের জন্য সাবেক টঙ্গী পৌর কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। ইতিমধ্যে পৌরসভা বিলুপ্ত হওয়ার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে অডিটোরিয়ামটির দায়িত্ব নেয়। মামলা চলমান অবস্থায় গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের অস্থায়ী কার্যালয় ও ব্যারাক হিসেবে অডিটোরিয়ামটিকে ব্যবহার করা হয়। একপর্যায়ে মামলায় উচ্চ আদালত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষে রায় দেন এবং জমির মূল্য পরিশোধের জন্য সিটি করপোরেশনকে আদেশ দেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা নমিতা দে জানান, আদালতের আদেশে সিটি করপোরেশন জমির মূল্য বাবদ প্রায় তিন কোটি টাকা জমা দিয়ে জমিটি হস্তান্তরের জন্য পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু টঙ্গী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের বাধা উপেক্ষা করে অডিটোরিয়ামটি ভেঙ্গে জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায়।
এব্যাপারে টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চেম্বার জজে আপিল করলে টঙ্গী পৌর অডিটোরিয়ামসহ আমদজির ওই জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত। পরবর্তীতে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চেওে আপিলটি নিস্পতি না হওয়া পর্যন্ত জমিতে চেম্বার জজের স্থিতাবস্থার আদেশ বহাল রাখা হয়।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অডিটোরিয়াম ও পাঠাগার ভেঙ্গে ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত আমাদের পক্ষে স্থিতাবস্থার রায় দিয়েছেন। তাই আমরা এটি ভেঙ্গে বাউন্ডারি দিয়ে কলেজের মূল ক্যাম্পাসের ভেতর নিয়ে এসেছি। ভবনের লোহা-লক্কর বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, আমরা ভবনের পুরনো লোহা-লক্কর বিক্রি করিনি, এগুলো কলেজে সংরক্ষিত আছে।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে কলেজে পুনরো লোহা-লক্করের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা অডিটোরিয়াম ভেঙ্গে দিয়েছে। ভবনের পুরনো লোহাগুলো আমরা কলেজের বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। টঙ্গী সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আলী জানান, কলেজ অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক প্রতিনিধি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং ছাত্রী হোস্টেল সুপার অহিদুল ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে অডিটোরিয়ামটি ভেঙ্গে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের লোহা-লক্কর রাতের অন্ধকারে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে দেয়া এসব লোহা লক্করের ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে দাবি করে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনধিকারভাবে সরকারের অন্য একটি সংস্থার ভবন ভেঙ্গে দিয়ে এবং বিনা টেন্ডারে লোহা লক্কর বিক্রি করে দিয়ে ওই তিন শিক্ষক চরম দুর্নীতি ও ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।
এমনকি উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থার মধ্যেই অডিটোরিয়াম ও লাইব্রোরির পুরো জায়গা উঁচু বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং মামলার তফসিলভুক্ত আদমজির পাশের খালি জায়গায় ৬ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ থেকে একটি প্রকল্পও অনুমোদন নেয়া হয়েছে। বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পটির কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসর একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধীপূর্ণ এ জমিতে টঙ্গী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিতর্কিত এসব কর্মকাণ্ডে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। জমিটির মালিকানা দাবিদার সিটি করপোরেশন ও পাশের সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এণ্ড কলেজ কতৃপক্ষের বাধা উপেক্ষা করেই দখলযজ্ঞ চলছে। টঙ্গী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ আদমজির মাঠের সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী এণ্ড কলেজ অংশে মহাসড়কের পাশে কিছু দোকান ঘরও নির্মাণ করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

Explore More Districts