সিলেটের শিক্ষার্থীদের বিলেতের স্বপ্ন ফিকে! চলতি বছরের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত পাঁচ মাসে তিন দফা পরিবর্তন আনা হয়েছে ব্রিটিশ অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) আইনে।
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- আগামী জানুয়ারি থেকে স্নাতকোত্তর কোর্সের বিদেশি শিক্ষার্থীরা স্পাউস সাথে নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। ফলে এতোদিন সিলেটের যেসব শিক্ষার্থী স্পাউস সাথে নিয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। বিলেতের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় এখন কেউ গন্তব্য পরিবর্তন করছেন, আবার কেউ যেতে চাচ্ছেন শিক্ষাভিসার পরিবর্তে ‘কেয়ারগিভার’ ভিসায়।
শিক্ষাভিসা নীতি শিথিল করায় গত কয়েক বছর থেকে সিলেট থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে পড়তে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ স্পাউস সাথে নিয়ে যান। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে পড়ালেখা না করে ওয়ার্কপারমিটে ভিসা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করেন। আবার কেউ কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। ফলে গত সেপ্টেম্বর সেমিস্টারের পর যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি বন্ধ করে দেয়। এরপরও যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত ছিল সেগুলোতে ভর্তির চেষ্টা করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
সিলেট থেকে যুক্তরাজ্য যাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই স্পাউস ও শিশুসন্তান সাথে নিয়ে গেছেন। স্নাতকোত্তর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই স্পাউস সাথে নিয়ে যান। আগামী বছরের মার্চ ও সেপ্টেম্বর সেশনে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য সিলেটের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। ভর্তির প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইএলটিএস কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু গত ১৯ জুলাই যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, হোম অফিস অভিবাসন আইনে বিশাল পরিবর্তন আনে। অভিবাসন আইন পরিবর্তন করে ঘোষণা দেওয়া হয় আগামী জানুয়ারি থেকে স্নাতকোত্তর কোর্সের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যে স্পাউস নিয়ে আসতে পারবেন না। কেবলমাত্র যারা পিএইচডি করতে যাবেন তারা সাথে স্পাউস নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই ঘোষনার পর থেকে স্পাউস সাথে নিয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স করতে যুক্তরাজ্যে যেতে আগ্রহী সিলেটের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে।
সূত্র জানায়, যারা এতোদিন স্পাউস সাথে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তারা এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। যুক্তরাজ্যের পরিবর্তে তারা অষ্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার খুঁজছেন ‘ওয়ার্কপারিমট ভিসা’। কেয়ারগিভার ভিসায় স্পাউস সাথে নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাজ্যে।
সিলেট নগরীর কুশিঘাটের ইশতিয়াক আহমদ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে তিনি স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি আইএলটিএস কোর্সেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু মধ্য জুলাইয়ে নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণার পর তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। এখন তিনি ‘কেয়ারগিভার ভিসায়’ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে একটি কনসালটেন্সি ফার্মের সাথে তিনি কথাবার্তা বলছেন। দু’একদিনের মধ্যে ভিসা প্রসেসিংয়ের বিষয়টি চুড়ান্ত করে ফেলবেন। স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে সাথে নিয়ে ৩ বছরের ‘কেয়ারগিভার’ ভিসায় যেতে তার প্রায় ২৪ হাজার পাউন্ড খরচ হবে বলে জানান।
সিলেট ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং ইন্সটিটিউটস এসোসিয়েশন-সেল্টা এর সভাপতি অ্যাডভোকেট খালেদ চৌধুরী জানান, স্পাউসসহ স্নাতকোত্তর কোর্সে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অনেক শিক্ষার্থী তাদের গন্তব্য পরিবর্তন করছেন। যারা যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে আইএলটিএস কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন তারা এখন অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা ও ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ফরেন এডমিশন এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফএসিডি-সিএবি) এর সভাপতি ফেরদৌস আলম জানান, সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যে পড়ালেখার এমনিতেই সুযোগ কমে গেছে। এরপরও যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ রয়েছে সেগুলোতেও স্পাউস নিয়ে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিলেটের শিক্ষার্থীরা কিছুটা হতাশ হয়েছেন। এখন হয়তো তারা বিকল্প চিন্তা করবেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন