দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে রুপা পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি, ৪ মাসে উদ্ধার ১০২ কেজি

দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে রুপা পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি, ৪ মাসে উদ্ধার ১০২ কেজি

ভারত থেকে বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে রুপা পাচারের ঘটনা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। জানা গেছে, এই অঞ্চলের ছয়টি জেলার ৮৪ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে প্রায় ২০টি চক্র সক্রিয়ভাবে এই পাচারের সঙ্গে জড়িত।

বিভিন্ন বর্ডার ব্যাটালিয়ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত এই অঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচারের সময় বিজিবি প্রায় ১০২ কেজি রুপা জব্দ করেছে।

একই সময়ে, বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, এই ধরা পড়া ঘটনার বাইরেও অসংখ্য পাচারের ঘটনা থেকে যাচ্ছে অজানা ও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই তথ্য উঠে এসেছে সীমান্তে কর্তব্যরত সদস্য ও সংশ্লিষ্ট চক্রের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে।

জব্দ হওয়া রুপার সামগ্রীগুলোর মধ্যে রয়েছে—রুপার গহনা, ঘড়ি, ব্যাগ, নুপুর, ব্রেসলেট, শিশুদের চুরি, রুপার পাথর ও আংটি ইত্যাদি।

চলতি বছরে সবচেয়ে বড় রুপা জব্দের ঘটনা ঘটে যশোরে। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সাতক্ষীরা-নাভারণ সড়ক হয়ে ঢাকাগামী একটি যানবাহন তল্লাশি করে ৭০.৫ কেজি ভারতীয় রুপার অলংকার জব্দ করে। এ সময় যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগুড়ী গ্রামের বাসিন্দা মৃত কাসেম আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর কবির লিটু (৪৮) ও তার ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান (২৫) কে আটক করা হয়।

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, জব্দকৃত রুপার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা।

সর্বশেষ রুপা জব্দের ঘটনা ঘটে শনিবার, ১৯ এপ্রিল, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ভাদিয়ালী সীমান্তে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরা-৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশরাফুল হক। তিনি জানান, উদ্ধারকৃত ১২.৯৭৫ কেজি রুপার বাজারমূল্য আনুমানিক ২৭ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। এই অভিযানে কোনো চোরাকারবারীকে আটক করা যায়নি।

এর আগের দিন, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গার মুন্সিপুর সীমান্ত থেকে ভারতীয় তৈরি ১২.২ কেজি রুপার গহনা উদ্ধার করে বিজিবি। জব্দকৃত গহনার আনুমানিক বাজারমূল্য ২৫ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান জানান, মুন্সিপুর সরদারপাড়ার প্রধান পিলার ৯৩ এর কাছাকাছি স্থান থেকে এসব গহনা জব্দ করা হয়, তবে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।

এর আগে, ১০ এপ্রিল, সাতক্ষীরা বিজিবি-৩৩ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাদিয়ালী সীমান্ত থেকে ৬.৬০৭ কেজি ভারতীয় রুপার গহনা জব্দ করে। এগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক ১৩ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। এ সময়ও কেউ আটক হয়নি।

২১ ফেব্রুয়ারি, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী পীরপুরকুল্লা গ্রামে বিজিবির অভিযানে ১৪.৯ কেজি রুপার গহনা জব্দ করা হয়। লে. কর্নেল নাজমুল হাসান জানান, এ রুপার মূল্য প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা। কোনো চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করা যায়নি।

বিজিবি সূত্র জানায়, এ ধরনের চোরাচালান প্রায়ই ঘটে। সীমান্তে সক্রিয় বিভিন্ন চক্রের সদস্যরাও নিশ্চিত করেছে যে রুপা ও সোনা পাচারের জন্য পৃথক নেটওয়ার্ক রয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এই নেটওয়ার্ক একেক সময় একেক সীমান্ত ব্যবহার করে, যা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। প্রায় ৩০০ জন, যাদের বেশিরভাগই ‘রানার’, এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত।

বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তে চোরাচালান একটি দীর্ঘস্থায়ী বাস্তবতা, যা দেশের সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, মুদ্রা বিনিময় হার, পণ্যের দাম ও প্রতিবেশী দেশে পণ্যের সহজলভ্যতার উপর নির্ভর করে। চুয়াডাঙ্গা-৬ ব্যাটালিয়নের লে. কর্নেল নাজমুল হাসান বলেন, যেসব পণ্যের দাম ও প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে দেশভেদে পার্থক্য থাকে, সেগুলোর চোরাচালান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেক ভারতীয় পণ্য এই সুবিধা ভোগ করে, যার ফলে চোরাচালান অনেকটা অনিবার্য হয়ে পড়ে।

বহু বিজিবি কর্মকর্তা জানান, চোরাচালানের রুট ও গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে জটিলতা রয়েছে। অধিকাংশ সময়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তারা আরও জানান, অনেক সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এসব চালান জব্দ করতে সক্ষম হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট, বিএসএফ-এর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টের ৩২তম ব্যাটালিয়নের সদস্যরা বিজয়পুর সীমান্ত ফাঁড়িতে প্রায় ৮৫ কোটি রুপির রুপা জব্দ করে। ওই চালানটি বাংলাদেশে আসছিল।

Explore More Districts