তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মতলব উত্তরের জনজীবন

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মতলব উত্তরের জনজীবন

চাঁদপুরের মতলব উত্তরে প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। সূর্যের প্রখর তাপে ক্লান্ত জীবনযাত্রা। বাংলাদেশে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মানেই অসহনীয় গরম। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই গরম যেন আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। চলতি বছরের তাপমাত্রা একাধিকবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে, কোথাও কোথাও তা ছাড়িয়ে গেছে।

ফলে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, কৃষক ও হকারদের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে। সূর্যের তাপ যেন তাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। দিনের বেলায় বাইরে বের হওয়া মানেই তাপদাহের সঙ্গে যুদ্ধ। এর ফলে স্বাস্থ্যখাতেও চাপ বাড়ছে। হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া, জ্বর ও চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা। গরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ লোডশেডিং।

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মেঘনা নদীর পাড় এখলাছপুর ব্লক বসানো মেঘনা নদীরপাড় গিয়ে দেখা যায়, অসহ্য গরমে সামান্য প্রশান্তির খোঁজে মানুষ ছুটে চলেছেন ষাটনল পর্যটন মেঘনা পাড়-থেকে আমিরাবাদ মেঘনা নদীর পাড়। সেখানে প্রতিদিন শত শথ মানুষের আনাগোনা। প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করা পথচারী সহজেই ১০ টাকায় কিনে পান করছেন এক গ্লাস লেবু পানির শরবত। তালের শাঁস ও কচি ডাব পানি, বরফ, চিনি কিংবা বিট লবণ মিশিয়ে তৈরি করা এই শরবত পূরণ করছে পিপাসা। গরম থেকে কিছুটা হলেও প্রশান্তি পাচ্ছেন পথচারী, শ্রমজীবী আর ছুটে চলা সাধারণ মানুষ। এদিকে প্রচন্ড তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন। আর এর মাঝেই একটু স্বস্তি পেতে সৌখিন ক্রেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তালের শাঁস ও কচি ডাব নিজে ও পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে বিভিন্ন শ্রণি-পেশার মানুষ সুস্বাধু তালের শাঁস খেতে দেখা যাচ্ছে।

তীব্র গরমের কারণে গত কয়েক দিনে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। তীব্র গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাস ও অফিস থেকে এসে ঠান্ডা-গরমে জ্বর, কাশি ও সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী নারী-পুরুষ।

চিকিৎসকদের মতে, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সড়কে উপর বসা দূষিত পানি ও বাসি খাবার গ্রহণের কারণে মানুষের বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে। আর গরম বেড়ে যাওয়ায় তৃষ্ণার্ত পথিক ও শিশুরা রাস্তার পাশে তৈরি করা শরবত, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরায় পঁচা-বাসি খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
তীব্র গরমের এই বাস্তবতা আমাদের শুধু কষ্টই দিচ্ছে না, ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তাও দিচ্ছে। এখনই প্রয়োজন ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া। পরিবেশ রক্ষা না করলে আমাদের জনজীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা.হাসিবুল ইসলাম বলেন, প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমে পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বা খোলা পরিবেশে যে শরবত বিক্রি হচ্ছে সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এই অস্বাস্থ্যকর পানি ও খোলা শরবত পান করলে আমাদের শরীরে নানা রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগ। তাই তীব্র গরমে এ ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ১৩ জুন ২০২৫

Explore More Districts