আড়াই,শ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে গত তিন মাসে প্রায় ৫ শতাধিক প্রসূতী মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব হয়েছে। এতে করে কমেছে সিজারিয়ানের হার। বিগত সময় এবং বর্তমানে যেখানে গর্ভবতী নারীদের বেশির ভাগই সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হয়ে থাকে। সেখানে গত তিন মাসে ৪ শতাধিকের বেশি গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারির বিষয়টি সত্যি অনেক প্রশংসনীয়। যা সরকারি হাসপাতালের প্রসূতিসেবায় একটি ইতিবাচক দিক নির্দশন করে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে চলতি বছরের এপ্রিল, মে ও জুন, এই তিন মাসে হাসপাতালে সর্বমোট ৪০৮টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১৪৩টি, মে মাসে ১৪৫টি এবং জুন মাসে ১২০টি। অন্যদিকে এই সময়ে সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে যথাক্রমে এপ্রিল ও মে মাসে ৪৫টি করে এবং জুন মাসের ৩০ তারিখ সোমবার পর্যন্ত মাত্র ২৫টি সিজারিয়ান ডেলিভারী হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মাসে হাসপাতালে গড়ে ৭০ শতাংশের বেশি ডেলিভারিই নরমাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে, যা দেশের অনেক জেলা হাসপাতালের তুলনায় ব্যতিক্রমী এবং প্রশংসনীয়। সিজারিয়ানের যুগে প্রতি মাসে হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা বাড়ার কারনে শহর এবং বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের রোগীদের মাঝে হাসপাতালের প্রতি অনেক আস্থা তৈরি হচ্ছে।
চাঁদপুর সদরসহ আশপাশের এলাকা থেকে আগত অনেক প্রসূতি মা ও তাদের পরিবার এখন আর অপ্রয়োজনীয় সিজার করানোর দিকে ঝুঁকছেন না। তারা চাইছেন স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করাতে। এর পেছনে যেমন রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রভাব, তেমনি রয়েছে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি ও চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা।
প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসাসেবার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গর্ভাবস্থায় সঠিক সেবা ও পরামর্শ পেলে অধিকাংশ মায়েরাই নিরাপদভাবে নরমাল ডেলিভারির মধ্য দিয়ে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হন। এতে একদিকে যেমন সিজার সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে, অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে সাশ্রয় হয়।
চাঁদপুরের মতো একটি জেলার জন্য এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে একটি দৃষ্টান্ত। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ যদি এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আরও জোরদার করে, তবে ভবিষ্যতে নরমাল ডেলিভারির হার আরও বৃদ্ধি পাবে।
সাধারণ জনগণের জন্য এটি এক আশাজনক বার্তা, সরকারি হাসপাতালে নিরাপদ ও স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভব ও সহজসাধ্য।
চাঁদপুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই অগ্রগতি শুধু সংখ্যার হিসেব নয়, এটা চিকিৎসা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, জনগণের আস্থা অর্জন এবং সরকারি সেবার প্রতি বিশ্বাস গঠনের প্রমাণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি জেলা পর্যায়ে আরও প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা এবং সেবা অবকাঠামো জোরদার করে, তবে অপ্রয়োজনীয় সিজারের প্রবণতা সারাদেশে আরও হ্রাস পাবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ এ কে এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। অনেক মা ও পরিবাররা এখন অপ্রয়োজনীয় সিজার এড়িয়ে নরমাল ডেলিভারিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আমরা চিকিৎসক দলও মা ও নবজাতকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখি। পাশাপাশি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ও দক্ষ মিডওয়াইফ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্যও রয়েছে।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ১ জুন ২০২৫