তিন তরুণের করুণ কাহিনি

তিন তরুণের করুণ কাহিনি

আশিক মিয়া, দোয়ারাবাজার
ইতালি পাঠানোর লোভ দেখিয়ে দোয়ারাবাজারের তিন তরুণকে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বন্দিদশায় মারপিটের শব্দ, গোঙ্গানি ও আর্তচিৎকারের শব্দ মুঠোফোনে শুনিয়ে দেশে থাকা স্বজনদের কাছে এখন ৫১ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। অসহায় তিন পরিবার দাবি করছে, এই অবস্থার জন্য দোয়ারাবাজারের বড়খাল গ্রামের বাসিন্দা মাফিয়া চক্রের দালাল আব্দুল বারেক, তার স্ত্রী রাজিয়া ও পুত্র রেজাউল করিম দায়ী।
উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভিখারগাঁও গ্রামের আব্দুস সাত্তারের পুত্র সুমন মিয়া (২২), কুশিউড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর পুত্র নোমান মিয়া (২৪), চনোগাঁও গ্রামের কোরবান আলীর পুত্র সৌরভ আহমেদ (২৪)’এর এমন করুণ পরিণতি ঘটেছে। এই তিন তরুণের পরিবারের সদস্যরা কেবল আহাজারি করে ঘটনার বিচার দাবি করছেন।
এই তিন তরুণের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের অক্টোবরে লিবিয়ায় যান সুমন, নোমান ও সৌরভ। এদের লিবিয়ায় পৌঁছার খবর পায় উপজেলার বরখাল গ্রামের বাসিন্দা লিবিয়া প্রবাসী আব্দুল বারেক। পরে তাদের ইতালি পাঠানোর প্রস্তাব দেয় আব্দুল বারেক। তিন যুবককে লিবিয়া থেকে ইতালি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রত্যেককে সাড়ে সাত লাখ টাকা করে দেবার চুক্তিও করে সে। সেই অনুয়ায়ী টাকা পয়সাও লেনদেন হয় রাজিয়া বেগম, পুত্র রেজাউল করিম ও বারেকের শ্যালক আব্দুল হামিদের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী টাকাও জমা হয়। টাকা জমা দেয়ার কিছুদিন পরেই আব্দুল বারেকের পরিবারের লোকজন জানায় সুমন, নোমান ও সৌরভ লিবিয়ায় মাফিয়ার হাতে আটকা পড়েছে। সাড়ে সাত লাখ টাকায় তাদের ইতালি পাঠানো সম্ভব হবে না। মাফিয়ার হাত থেকে ছাড়ানি সহ আর তিন লাখ টাকা করে প্রত্যেককে দিতে হবে। গেল তিন এপ্রিল আব্দুল বারেকের স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের সাথে কথা বলে ওই তিন তরুণের স্বজনেরা তিন লাখ টাকা জমা করেন বারেকের স্ত্রী’র কাছে। এসময় তিনশত টাকা মূল্যের স্টাম্পেও চুক্তিপত্র হয়। এরপর আরও দুই মাস গেছে। গেল কয়েকদিন হয় মারপিট করে বাড়িতে ফোন দিয়ে এদের কান্না চিৎকার শুনায় মাফিয়ারা।
উপজেলার ভিখারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সুমনের ভাই সেলিম আহমদ জানান, আমার ভাই ফোনে বাবাকে বলেছে, ‘আমাকে মারপিট করছে, আমি আর বঁচবো না, তাড়াতাড়ি ১৭ লাখ টাকা পাঠাও, আমাকে বাঁচাও বাবা।’
একই কথা জানান নোমান ও সৌরভের পরিবারের সদস্যরা। মারপিটের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে মাফিয়ার দালালরা।
এই তিন তরুণের পরিবারের সদস্যরা জানান, এখন বারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। তার স্ত্রী এবং ছেলেও গ্রামে নেই।
বুধবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকরা বড়খাল গ্রামে গিয়ে বারেকের বসতঘর তালাবদ্ধ পান। সারাদিন চেষ্টা করে বারেকের স্ত্রী রাজিয়ার ফোনে যোগযোগ করা যায় নি। মুঠোফোন বন্ধ ছিল।
সন্ধ্যায় বারেকের স্ত্রী রাজিয়া ফোন রিসিভ করে সাংবাদিকদের জানান, তিনি এই তিন তরুণের পরিবারের কাছ থেকে ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আরও ১৬ লাখ টাকা পাঁচ দিনের মধ্যে দিলে এদেরকে ইতালি পাঠানো হবে বা তারা ইচ্ছে করলে দেশে আসতে পারবে। স্বামী বারেকের সঙ্গে পাঁচদিন হয় যোগাযোগ না হওয়ায় এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেব দুলাল ধর জানান, ফেসবুকে বিষয়টি দেখে তিন পরিবারের লোকজনকে থানায় আসার জন্য বলা হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে কীভাবে সহয়োগিতা করা যায় দেখবেন তারা। আব্দুল বারেকের পরিবারের লোকজনও বাড়িতে নাই বলে জানান তিনিও।

Explore More Districts