ঢাকা-সিলেট সড়কে কাজের অগ্রগতি ১৬ শতাংশ, যাতায়াতে দুর্ভোগ

ঢাকা-সিলেট সড়কে কাজের অগ্রগতি ১৬ শতাংশ, যাতায়াতে দুর্ভোগ

ঢাকা-সিলেট সড়কে কাজের অগ্রগতি ১৬ শতাংশ, যাতায়াতে দুর্ভোগ

ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেটের লালাবাজার পর্যন্ত মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য ছিল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের।

ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেটের লালাবাজার পর্যন্ত মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীতের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য ছিল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটি শুরুর সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে। এদিকে নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট খানাখন্দ এবং নিয়মিত সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মহাসড়কজুড়ে তৈরি হয়েছে বেহাল দশা। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ পথে যাতায়াত করা লোকজন।

প্রকল্প অনুযায়ী, ২০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটিতে চার লেনের মূল পথ এবং ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য দুই পাশে আরো দুটি লেন নির্মাণ করা হবে। নির্মাণকাজ সময়মতো শেষ করতে পুরো সড়ক ১২ ভাগ করে ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জয়েন্ট ভেঞ্চার নিযুক্ত করা হয়। ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও সড়ক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জমি তাদের বুঝিয়ে দিতে পারছে না প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটিতে জমি অধিগ্রহণ সম্পর্কিত ৬৬টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১০টি নিষ্পপ্তি করে ঠিকাদারদের জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ৫৬টি মামলা এখনো চলমান। যেসব জায়গা ঠিকাদাররা বুঝে পেয়েছেন সেগুলোয় মাটি উন্নয়ন, সেতু-কালভার্ট নির্মাণের মতো কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা।

ধীরগতির নির্মাণকাজের কারণে পুরো মহাসড়কজুড়ে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় নিয়মিত সংস্কার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। ফলে বেহাল অবস্থায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। ৪-৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত।

মহাসড়কটির বেহাল দশা প্রসঙ্গে নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী অংশে মহাসড়কটি এতই ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে যে জেলা হাসপাতালে অনেক রোগীকে যানবাহনের বদলে হেঁটে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃষ্টি হলে সড়কটির অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। বেহাল দশার কারণে স্থানীয় যাতায়াতে ভাড়াও বেড়েছে। ২০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

একদিকে ধীরগতির নির্মাণকাজের জন্য যেমন ব্যাপক জনদুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি প্রকল্পটি কবে শেষ হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হবে। কাজ সম্পন্ন করতে প্রকল্পটির ডিপিপি সংশোধনেরও প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সওজের কর্মকর্তারা। অতীতে সওজের বিভিন্ন প্রকল্পে দেখা গেছে, মেয়াদ বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়িয়ে নেয়া হয়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে অবশ্য এখনো ব্যয় বাড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘মূলত ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য আলাদা একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কাজ আমরা করছি না। আমাদের ঠিকাদাররা এখন মূলত স্ট্রাকচারের কাজ এবং যে জায়গাগুলোয় আমরা জমি পেয়েছি, আগে থেকেই সওজ অধিদপ্তরের জমি আছে সেখানে কাজ করছেন।’

সড়কটির বেহাল অবস্থা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোহাম্মদ ফজলুল করিম বলেন, ‘‌ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশ আমাদের প্রকল্প-বহির্ভূত। এটা আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে। মূলত এ অংশটির বেহাল দশার কারণে জনভোগান্তি হচ্ছে। ঢাকা-সিলেটের মধ্যে যাতায়াতে অতিরিক্ত ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগছে। চলতি বর্ষায় আমাদের প্রকল্পভুক্ত অংশেও সড়কটি খারাপ হয়েছে। কিন্তু আমরা সব সময় এটা রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছি।’ অভিযোগ করার মতো বেহাল দশা ঢাকা-সিলেট প্রকল্প এলাকাভুক্ত অংশে তৈরি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তায় সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি।

Explore More Districts