মেডিকেল ভর্তির
প্রশ্নপত্র ফাঁস
স্টাফ রিপোর্টার ঃ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২জনকে গ্রেফতার করার পর আতংকে রয়েছেন খুলনার মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের সাথে জড়িত অনেকে। বিশেষ করে একাধিকবার রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার হাতে আটক হওয়া খুলনার এক সাবেক ছাত্র নেতা ও বর্তমান চিকিৎসক নেতার প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি চলছে বেশকিছুদিন ধরেই। এমনকি এখনও ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য কোচিং পরিচালকের মধ্যেও বিরাজ করছে আতংক।
মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারের আড়ালে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি গত পরশু ১২জনকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় গ্রেফতারকৃতদের নেতৃত্বাধীন চক্রটি ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শত শত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্ন সরবরাহ করেছে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করে ওই চক্রটি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), ডা. সোহেলী জামান (৪০), ডাক্তার মোহাম্মদ আবু রায়হান, ডা. জেডএম সালেহীন শোভন (৪৮), ডা. মো. জোবায়দুর রহমান জনি (৩৮), ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭), ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আখতারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি (৪৫) ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ৪টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ব্যাংক কার্ড, ভর্তির এডমিট কার্ড নগদ দুই লাখ ১১ হাজার, থাইল্যান্ডের মুদ্রা ১৫ হাজার ১০০ বাথ উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী বলেন, পাবলিক পরীক্ষা এলেই প্রশ্ন ফাঁস চক্রটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই চক্র নানা কায়দায় প্রশ্নফাঁস করতো। তারা শিক্ষাখাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এসব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রকে নির্মূল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার টিম।
এদিকে, ঢাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ১২ সদস্যের গ্রেফতারের আগেই খুলনা থেকে কয়েকজন কোচিং পরিচালককে ডেকে নেয়া হয়েছিল ঢাকায়। সেখানে তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলেও জানা গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক নেতাও রয়েছেন। সর্বশেষ সিআইডির আনুষ্ঠানিক গ্রেফতারের ঘোষণার পর যেসব চিকিৎসক ও কোচিং পরিচালককে ঢাকায় ডাকা হয়েছিল তাদের মধ্যে নতুন আতংক শুরু হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এজন্য তারা বিভিন্নভাবে তদ্বিরও শুরু করেছেন। একজন চিকিৎসক নেতা ও খুলনার একটি আলোচিত কোচিং পরিচালক গতকাল পূর্বাঞ্চলকে জানান, সিআইডি ঢাকায় যাদেরকে ডেকেছিল তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেই চূড়ান্তভাবে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তবে অপর একটি সূত্র জানায়, যেসব কোচিং পরিচালকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অন্য কোন সংস্থার দ্বারা তদন্ত চলছে তাদের ব্যাপারে আপাতত ছাড় দেয়া হয়েছে। ওই চিকিৎসক নেতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকায় পরিচালিত একটি কোচিংয়ের একজন কর্মচারীও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বলেও একটি সূত্র জানায়। সব মিলিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের একই নামে খুলনার কোচিং সেন্টারটিও নজরদারির বাইরে নেই বলেও মন্তব্য অনেকের।