ডেঙ্গুর ভুয়া চিকিৎসক রফিক উল্লাহকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ

ডেঙ্গুর ভুয়া চিকিৎসক রফিক উল্লাহকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ

ডেঙ্গুর ভুয়া চিকিৎসক রফিক উল্লাহকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ

ভুয়া চিকিৎসক রফিক উল্লাহকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যমুনা নিউজে খবর প্রচারের পর সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গুর ভুয়া চিকিৎসক রফিক উল্লাহকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) যমুনা টেলিভিশনে ভুয়া ডাক্তার রফিক উল্লাহকে নিয়ে খবর প্রচারিত হয়। মৃত আরেক চিকিৎসকের বিএমডিসি লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে নিজ ঘরে বসেই ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে আসছিলেন। প্রেসক্রিপশনে লেখা তার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩০৩০। কিন্তু এই নম্বরে পাওয়া যায় আরেক চিকিৎসকের ছবিসহ নাম। সৌদি আরবে চিকিৎসা দেয়ার দাবিও করেন এই ভুয়া ডাক্তার।

সৌদি আরবে ২৫ বছর চিকিৎসা দেয়ার অভিজ্ঞতার কথা শুনে বাড়ির পাশে পরিচিত ডাক্তার রফিক উল্লাহর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারী। রোগী জানতেন, দেশে ফিরে নাকি ঘরেই সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ডেঙ্গু আক্রান্ত জানার পরও হাসপাতালে নিতে দেননি ওই ডাক্তার। উল্টো নিজেই স্যালাইন দিতে গিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেন রোগীকে। স্বজনদের অভিযোগ, স্যালাইন দেয়ার পর ক্যানুলা লাগাইতে তার লেগেছে ২০ মিনিটের বেশি। রক্তে বিছানা ভিজে যায়। একপর্যায় নাভির ভেতরে ইনজেকশন দেয়া হয়। এটা দেয়ার পর রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর, রোড ৭ এর বি, বাড়ি নম্বর ১৬। প্রেসক্রিপশন বলছে, বাসাতেই দু’বেলা চিকিৎসা দেন ওই ডাক্তার। সে ঠিকানা ধরে রোববার তার বাসায় যায় যমুনা নিউজ। রোগী আসার খবরে নিজেই ছুটে আসেন, সাংবাদিক দেখে বেশ ঘাবড়ে যান। বলেন, গ্যারেজ রুম আর বাসা মিলে ভালোই চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। মো. রফিক উল্লাহ বলেন, পরিচিতের মধ্যে কোনো রোগী যদি আসে, এখানেই (গ্যারেজ রুম) দেখি।

প্রেসক্রিপশনে লেখা তার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বরে পাওয়া যায় আরেক চিকিৎসকের নাম। ১৯৭৩ সালের নিবন্ধন, যার মেয়াদ শেষ হয় ১৯৭৮ সালে। রফিক উল্লাহ দাবি করেছিলেন, আসল সার্টিফিকেট তার বাসায় রয়েছে। পরে যেটি দেখান, সেটিও আরেক চিকিৎসকের। শেষমেষ রফিক উল্লাহ স্বীকার করেন, তিনি আসলে ডাক্তার নন, মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট। যারও রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩৩ বছর আগে।

দোষ স্বীকারের পরও হম্বিতম্বি করেন এই ভুয়া ডাক্তার। বলেন, শুধু ডেঙ্গু চিকিৎসাই নয়, সার্জারিও করতে পারেন তিনি। বাসায় নিয়ে যমুনা নিউজকে বারবার দেখালেন আরবিতে লেখা সৌদি আরবে চিকিৎসা দেয়ার নানা কাগজপত্র। ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, এসব দেখিয়েই অসহায় রোগীদের ব্ল্যাকমেইল করেন রফিকুল্লাহ। ভুক্তভোগী একজন জানান, ওই ডাক্তার বলেছেন, পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা ইনজেকশন দেয়া হবে; তাহলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

চিকিৎসকদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বিএমডিসি’র সাবেক সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানিয়েছেন, যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার মতো অপরাধ করেছেন ওই ভুয়া ডাক্তার। তিনি বলেন, যিনি চিকিৎসক নন, তিনি কোনোভাবে যদি নিজেকে চিকিৎসক দাবি করেন, ডাক্তার পরিচয়ে কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন; এটা প্রতারণা তো বটেই, বরং বড় ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ সময়ে রোগীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জোর তাগিদ দিয়েছেন প্রকৃত চিকিৎসকরা।

/এএম

Explore More Districts