ডিজিটাল আইনের বদলে এবার সাইবার আইন – News Tangail

ডিজিটাল আইনের বদলে এবার সাইবার আইন – News Tangail

নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বাদ দিয়ে বিষয়বস্তুতে বড় পরিবর্তন এনে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নামে নতুন একটি আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে নতুন এ আইনের খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ আইনে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে শুধু জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এর ফলে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের জন্য কাউকে গ্রেফতার করার প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিলেটিভ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

সচিবালয়ে নিজ দফতরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে। যদি এখন বলি বাতিল করা হয়েছে, তা হলে আপনারা প্রশ্ন করবেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারাই তো এ আইনে আছে। তা হলে আপনি কেন বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে আমি পরিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করেছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল অগ্রগতি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে আইনটির নাম দেওয়া হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। এ আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেগুলো এখানে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। সেগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারায় পরিবর্তন এনে আইনটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রহিতকরণ ও হেফাজতকরণের প্রভিশন রেখে আমরা সাইবার নিরাপত্তা নিরাপত্তা আইন করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিদ্যমান মামলাগুলো স্বাভাবিকভাবেই সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে চলে যাবে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন এবং পাস হবে বলে তিনি আশাবাদী।

আইনমন্ত্রী জানান, নতুন আইনে সাজা যেমন কমানো হয়েছে, তেমনি অনেক অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা উসকানির অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড থেকে কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে। এ ছাড়া মানহানি মামলার জন্য কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মানহানির অভিযোগে মামলা হলে গ্রেফতার করা হয় না। নতুন আইনে একটি ধারায় হ্যাকিংয়ের জন্য অনধিক ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে আইনে গণমাধ্যমের জন্য আলাদা কোনো বিধান রাখা হয়নি বলে জানান তিনি।

আনিসুল হক বলেন, সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেই ধারাগুলো প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তবে অনেক ধারা, যেমন মানহানির ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড। নতুন আইনে সেটি পরিবর্তন করে করা হয়েছে জরিমানা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ নম্বর ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তা হলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় এ অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিলেও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন এ অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী জানান, জরিমানা না দিলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। কিন্তু অপরাধের মূল শাস্তি হলো জরিমানা। প্রস্তাবিত আইনে অনেক ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ছিল। বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তি কমানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। উদাহরণ হিসেবে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা-২১-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগাণ্ডা বা প্রচারণার জন্য দণ্ডের বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি এ অপরাধ করেন, তা হলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আইনমন্ত্রী বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে এ সাজা কমিয়ে এখন করা হয়েছে সাত বছর। এ ছাড়া অনেক ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধের জন্য সাজা দ্বিগুণ বা সাজা বাড়ানো ছিল। প্রস্তাবিত আইনে প্রত্যেকটি ধারায় যেখানে দ্বিতীয়বার অপরাধের ক্ষেত্রে বাড়তি সাজার কথা আছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটার উপক্রম হয়, তা হলে ওই ব্যক্তির অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে এ ধারায় সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের বাড়তি সাজা বাতিল করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের জন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। নতুন আইনে এটি কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বহুল বিতর্কিত ২৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানির অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তা হলে এই ব্যক্তির এ কাজ হবে একটি অপরাধ। কোনো ব্যক্তি এ অপরাধ করলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর এ অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সাজা আরও বেশি হবে। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে এটি পরিবর্তন করে সাজা কমিয়ে সর্বোচ্চ দুই বছর করা হয়েছে এবং জামিনযোগ্য করা হয়েছে (আগে অজামিনযোগ্য ছিল)।

আইনমন্ত্রী বলেন, নতুন আইনটি নিয়ে কোনো বিতর্ক হবে না এবং এটি সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যেসব আইন করা হয়েছে সেগুলো আমাদের আইনের চেয়ে কঠিন। এখন নতুন যে আইনটা করা হয়েছে সেটা সাইবার ক্রাইম বন্ধ করতে অত্যন্ত সহায়ক হবে। আর সাংবাদিকরা যে সমস্যা নিয়ে ব্লেম করছিলেন সেই অপব্যবহারটাও বন্ধ হবে।

পাঁচ বছরের মাথায় এসে কেন আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন করা হচ্ছে-সে প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা বলে আসছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার হচ্ছে লিসিনিং গভর্মেন্ট। এ আইন যখন অপব্যবহার করা হচ্ছিল, সেটা স্বীকার করার মতো সৎসাহস আমাদের ছিল, স্বীকারও করেছি। এই সৎসাহসও আমাদের আছে যে ক্ষেত্রে অপব্যবহার হচ্ছিল সেগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কারণেই সাইবার নিরাপত্তা আইনে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিকালে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারা পরিবর্তন করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। নতুন আইন পাস হলে আগেরটি বাতিল হবে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার মনে করেছে সাইবার অপরাধ অনেক হচ্ছে। তাই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অনেক ধারাকে সংযুক্ত করে নতুন আইনটি করা হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী একটা সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি থাকবে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

“নিউজ টাঙ্গাইল”র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

Explore More Districts