টাকার জন্য অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ – দৈনিক আজাদী

টাকার জন্য অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ – দৈনিক আজাদী

চন্দনাইশে টাকা না পেয়ে নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম মুক্তা আক্তার (২৬)। বেধম মারধরের পর ওষুধ খাইয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ভিকটিম মুক্তার পরিবারের।

গত রবিবার রাতে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড পলিয়ার পাড়ার নদ্দিয়ার বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ওইদিন রাত ১১টার দিকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।

ঘটনার পরপর নিহতের স্বামী স্বামী মো. পারভেজ (৩৬) ও শাশুড়ি জাহানারা খাতুন (৫৪) পলাতক রয়েছে।

নিহত গৃহবধূ মুক্তা আক্তার উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাশিমপুর গ্রামের ভান্ডারী পাড়ার নাছির উদ্দিনের কন্যা। বিগত ৬ বছর পূর্বে সামাজিকভাবে মুক্তা ও পারভেজের বিয়ে হয়।

নিহত মুক্তা আক্তারের চাচাতো ভাই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে আমার চাচাতো বোনের সাথে প্রবাসী মো. পারভেজের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বিয়ের কয়েক মাস পর তার স্বামী মধ্যপ্রাচ্যের ওমান চলে যায়। ইতিমধ্যে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তার বয়স আড়াই বছর।

এদিকে গত ৩ মাস আগে মুক্তার স্বামী বিদেশ আবার দেশে আসে। বর্তমানে আমার বোন মুক্তা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার স্বামী পারভেজ প্রায় সময় প্রবাসে কষ্টে আছেন দাবি করে আমার চাচা থেকে পর্যায়ক্রমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয়। সম্প্রতি আরো ৫ লাখ টাকা দাবি করে পারভেজ। তাকে আর টাকা দিতে পারবেনা বলার পর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে তাকে অমানুষিক নির্যাতন ও মারধর শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, মারধরের একদিন পর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে আমার চাচাতো বোনকে সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু ট্যাবলেট খেতে দেন। সেগুলো খাওয়ার পর সে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদেরকে খবর দেয়া হয়। আমরা এসে তাকে দ্রুত দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এদিকে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে রওশনহাট বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতাল এলাকায় পৌছলে সে মারা যায়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেন তারা। তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলো প্রমাণ করে তাকে অমানষিক নির্যাতনের চিত্র।

নিহতের পিতা নাছির উদ্দিন জানান, আড়াই বছরের নাতির কথা ভেবে মেয়ের উপর চলা নির্যাতন ও অবিচারগুলো মুখ বুঝে সহ্য করেছি। জামাইয়ের চাহিদা মতো টাকাও দিয়েছি। সম্প্রতি মেয়ের জামাই বিদেশ থেকে এসে আবারো ৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়ের জামাই ও শাশুড়ি মিলে তাকে ব্যাপক মারধর করে। এর আগে সে তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকবার চলে আসতে চেয়েছে। নাতির কথা বলে তাকে প্রতিবারই শান্তনা দিয়েছি।

অবশেষে তারা আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করলো। এ ঘটনার জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি। এদিকে নিহত মুক্তার স্বামী, শ্বাশুড়ি পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার সাংবাদিকদের জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিম মুক্তা আক্তারের পিতা নাসির উদ্দীন বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

Explore More Districts