টঙ্গী স্বজন সমাবেশ এবং শুচি পাঠচক্র ও পাঠাগার আয়োজনে হেমন্ত সাহিত্য আড্ডা – Daily Gazipur Online

টঙ্গী স্বজন সমাবেশ এবং শুচি পাঠচক্র ও পাঠাগার আয়োজনে হেমন্ত সাহিত্য আড্ডা – Daily Gazipur Online

অলিদুর রহমান অলি: শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে হেমন্ত। ফসলের মাঠে নতুন ধানের গন্ধ, হিমেল হাওয়ায় শিরশিরে শীতের পরশ, আর প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় অপরূপ রূপ যেন মনকে করে তোলে উদাসী। এই মনোমুগ্ধকর ঋতুতেই যুগান্তর স্বজন সমাবেশ, টঙ্গী শাখা এবং শুচি পাঠচক্র ও পাঠাগার আয়োজন করে “হেমন্ত সাহিত্য আড্ডা”।
২৯ অক্টোবর, বুধবার সন্ধায় এ আড্ডায় গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সংগীত আর ভাবের বিনিময়ে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ। তরুণ লেখক-লেখিকারা নিজেদের সৃষ্টি শোনান, প্রবীণ সাহিত্যিকরা দেন প্রেরণা ও পরামর্শ। হেমন্ত সাহিত্য আড্ডা শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়— এটি ভাবের এক উৎসব, মনের দ্বার উন্মোচন। এখানে বন্ধুত্ব, সংস্কৃতি ও সাহিত্য মিলে যায় এক অনাবিল আনন্দে ও অনিন্দ্য বন্ধনে।
যুগান্তর স্বজন সমাবেশ টঙ্গী শাখার সভাপতি অলিদুর রহমান অলির সভাপতিত্বে এবং শুচি পাঠচক্র ও পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা শাহজাহান শোভনের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন, কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়ারুল হক, কবি ফুয়াদ সরকার, কবি আতিক শাহরিয়ার, আবৃত্তি শিল্পী শাহীন কাওসার, অভিনেতা রাফিজুল ইসলাম, আনিছুল রহমান লিপু, মোস্তাফিজুর রহমান স্বপন, মিজানুর রহমান মীর, মাসুদ আলম, এম এ মালেক প্রমূখ।
হেমন্তের সোনাঝরা দিনের অনুভূতি নিয়ে কবি
কবি আতিক শাহরিয়ার বলেন “ হেমন্ত যখন নিকটে চলে আসে শীত কি আর দূরে থাকতে পারে, হিম হিম শীতের আমেজ হেমন্তেই শুরু হয়। এমনই হেমন্তের দিনে আমরা গ্রামে বসে বিভূতিভূষণের পথের পাচালি পড়তাম, অপু, দুর্গা সেইসব চরিত্র মনের ভিতর অন্যরকম এক পরিবেশ তৈরি করতো। মনে হতো ওই সময়ে ওই কালে যেন বিরচণ করছি। আমরা শরৎ সাহিত্য নিয়ে সকালের রোদে বসে পড়তাম। মনে পড়ে গৃহদাহ, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন, মহেশ, শ্রীকান্ত বইগুলোর কথা। হেমন্ত ঋতু যেন হতো বই পড়ার ঋতু। প্রকৃতিতে বিরাজ করতো না শীত না গরম। এখনকার হেমন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীত আসতে দেরি হয়। গরমটাই বেশি। যহোকে এদেশের বুকে পূর্বের হেমন্ত আবার আসুক ফিরে।
আড্ডার শুরুতেই কবি ফুয়াদ সরকার বলেন, চিন্তা, অনুভূতি আর নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ আড্ডার বিশেষ দিক ছিল তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে সাহিত্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেন। প্রবীণ সাহিত্যিকরা তাঁদের উৎসাহ দেন, লেখালেখিতে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেন।
আবৃত্তি শিল্পী শাহীন কাওসার বলেন, আধুনিক সাহিত্যের ধারা, পাঠাভ্যাসের পরিবর্তন এবং নতুন লেখকদের চ্যালেঞ্জ। সবাই একমত হন— সাহিত্য কেবল পৃষ্ঠার শব্দ নয়, এটি মানুষের মনের সংযোগের সেতুবন্ধন।
জিয়ারুল হক বলেন, হেমন্তের নরম আলোয় যখন দিন শেষ হলো, তখনও অনেকের চোখে মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। ‘হেমন্ত সাহিত্য আড্ডা’ যেন এক বিকেলের মধ্যে ছড়িয়ে দিলো সৃজনের উষ্ণতা, ভাবের গভীরতা এবং শব্দের আনন্দ। সাহিত্য আমাদের শেখায় মানুষ হতে, ভালোবাসতে, ভাবতে।
অভিনেতা রাফিজুল ইসলাম, বলেন হেমন্তের মৃদু হাওয়ায় জেগে ওঠে সৃষ্টির উচ্ছ্বাস, হেমন্ত সাহিত্য আড্ডা সেই অনুপ্রেরণার ঠিকানা। কবিতা, গল্প আর গানে মেতে ওঠে সাহিত্যপ্রেমীরা, এই আড্ডাই হেমন্তকে করে তোলে আরও রঙিন ও প্রাণময়।
অলিদুর রহমান অলি বলেন, একটি কবিতা যেমন অন্তরের দরজা খুলে দেয়, তেমনি একটি গল্প সমাজের আয়না হয়ে ওঠে। আজকের এই আড্ডা কেবল শব্দের মেলা নয়, এটি হৃদয়ের মেলবন্ধন— নতুন প্রজন্মকে সাহিত্যের আলোয় অনুপ্রাণিত করার এক সুন্দর প্রয়াস।
সাহিত্য হোক আমাদের জীবনের স্পন্দন, আর হেমন্তের মতোই আমাদের মন থাকুক স্নিগ্ধ ও সোনালি।

Print Friendly, PDF & Email

Explore More Districts