টঙ্গী টিএনটি কলোনী জামে মসজিদের খতিবকে গাছে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার – Daily Gazipur Online

টঙ্গী টিএনটি কলোনী জামে মসজিদের খতিবকে গাছে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার – Daily Gazipur Online

ডেইলি গাজীপুর প্রতিবেদক : গাজীপুরের টঙ্গী টিএনটি কলোনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মহিব্বুল্লাহ সাহেবকে পঞ্চগড়ের হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় গাছের সঙ্গে সিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা তাঁকে দেখতে পেয়ে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বাজারে যাওয়ার পথে তাঁরা দেখতে পান, একজন ধর্মীয় ব্যক্তিকে একটি গাছের সঙ্গে হাত-পা সিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, মাওলানা মহিব্বুল্লাহ সমাজে চলমান নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক মূল্যবোধ ও আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক নিয়ে জুমার খুতবায় নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিতেন।
এ বিষয়ে তিনি সম্প্রতি কিছু মহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন বলেও জানা গেছে।
পরিবারের দাবি, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছিল।
বুধবার সকালে প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হয়ে তিনি আর বাসায় ফেরেননি।
পরে স্থানীয়রা পঞ্চগড়ের হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় তাঁকে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান।
পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) বলেন,“আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত একটি ঘটনা। কে বা কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা শনাক্তে কাজ চলছে।”
বর্তমানে মাওলানা মহিব্বুল্লাহর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
গণমাধ্যমকে তাঁর বড় ছেলে মাওলানা আব্দুল্লাহ জানান, “আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে মসজিদে ইমামতি করলেও সম্প্রতি নানা ধরনের হুমকির মুখে ছিলেন। তবে তিনি কখনো কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করেননি, জাতি বা গোষ্ঠীগত বিষয়েও কোনো মন্তব্য করেননি। এখন হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়াটা আমাদের কাছে খুবই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন,এর আগে, টিএনটি কলোনি মসজিদের বারান্দায় ইসকনের নামে একটি হুমকিমূলক চিঠি পাওয়া যায় বলে পরিবার জানায়। একই ধরনের আরেকটি চিঠি তাদের বাসার কাছেও পাওয়া গিয়েছিল।
চিঠিতে পাঞ্জাবি-টুপি পরা এক হুজুরের প্রতিকৃতি এঁকে, তার গলায় ছুরি ধরে লেখা ছিল, “তোদের খতিবকে ধীরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। শেষ অবধি ওকে সম্পূর্ণ একা বানিয়ে রাস্তার পাগল বানানো হবে। কারণ যোনি দেবী জগৎজয়ী কালী মাতা কাম দেবতার উপরে কেউ নেই। আজ হোক বা কাল হোক, পূর্ববাংলা ইসলামী মৌলবাদীদের মুক্ত করা হবে। আমাদের জনবলের সংকট নেই। তোদের বায়তুল মোকাররমকেও ঘুরিয়ে দেয়া হবে। এখন আর কথা নয়, আমরা অ্যাকশনে যাবো।”
-চিঠিটির তারিখ দেওয়া ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, ওই হুমকি ও নিখোঁজের ঘটনাগুলোর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক থাকতে পারে। মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ সম্প্রতি ‘ইসকন ও ভাগওয়া লাভ ট্র্যাপ’ বিষয়ক বক্তব্যে অংশ নেন, যার পর থেকেই তিনি হুমকি পেতে শুরু করেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গাজীপুরে হিন্দু যুবক কর্তৃক মাদরাসা ছাত্রী ধর্ষণের বিচার দাবি করে আসা মাওলানা আতাউল্লাহ বিক্রমপুরীকেও ইসকন কর্তৃক হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং মসজিদের মুসল্লিরা দ্রুত ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

Explore More Districts