টঙ্গীতে দুই শিশু হত্যার আসামী সনাক্ত হয় যেভাবে – Daily Gazipur Online

টঙ্গীতে দুই শিশু হত্যার আসামী সনাক্ত হয় যেভাবে – Daily Gazipur Online

ডেইলি গাজীপুর প্রতিবেদক: সালেহা বেগম একজন স্ত্রী, একজন মা, এক ছাদের নিচে বসবাস করা তিন সন্তানের একজন অভিভাবক। তবে তার ভেতরে যেন চলছিল এক অদৃশ্য দ্বন্দ্ব। তার স্বামী আবদুল বাতেন জানান, আমার স্ত্রীর একটু সমস্যা আছে। অনেক সময় বলে সে চলে যাবে। মাঝে মাঝে কান্না করে কেন বিয়ে বসলো। একা থাকতে চাইতো যাতে তাকে কেউ যেন ডিস্টার্ব করতে না পারে। সন্তানেরাও যেন ডিস্টার্ব করতে না পারে এমনটাও চাইতো সে। কাউকে পছন্দ করতো না সে।
এমন কথাগুলো হয়তো অনেকেই হালকাভাবে নিয়েছিল। কেউ ভাবেনি, এই নিঃসঙ্গতা, এই মানসিক চাপ একদিন এমন ভয়াবহ পরিণতি আনবে যেখানে একজন মা হয়ে উঠবেন নিজের সন্তানের মৃত্যুদূত।
গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে তাদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে কেন বা কী কারণে আলেয়া সন্তানদের হত্যা করেছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের টঙ্গী জোনের উপকমিশনার এনএম নাসির উদ্দিন বলেন, হত্যার সময় মায়ের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে দুই শিশু। এ সময় আলেয়ার দুটি আঙুলে দাগ পড়ে। এই সূত্র ধরে হত্যার আসামী সনাক্ত করা হয়েছে।
টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরের রূপবানের টেক এলাকার আটতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি বাসা থেকে শুক্রবার দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মালিহা ও আব্দুল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল বাতেন ও আলেয়া বেগম দম্পতির সন্তান। ঘটনার পর তাদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।


আব্দুল্লাহ ও মালিহা স্থানীয় ক্যামব্রিজ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার ক্যামব্রিজ স্কুল এন্ড কলেজের “শিশু শ্রেণীর গোলাপ শাখার শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ও মালিহাকে নিজ বাসায় তাদের নিজ মা জবাই করে হত্যা করে। আজ রোববার স্কুল মাঠে শিশু দুটির শিক্ষক ও সহপাঠীদের নিয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত ও দোয়ার আয়োজন করে। মালিহা ক্যামব্রিজ স্কুল এন্ড কলেজের প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থী।
টঙ্গীর জামাই বাজার এলাকায় ঘটে গেল এ বর্বরোচিত জঘন্যতম হত্যাকান্ড। দশ মাস দশ দিন যে মা সন্তানকে গর্ভধারণ করে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন সেই মায়ের হাতেই আজ দুই সন্তানের প্রদীপ নিজ হাতে নিভিয়ে দিলেন। নিজ হাতে গলা কেটে দুই সন্তানকে হত্যা করলো। কেন এই অবুঝ মাসুম বাচ্চা দুটি হত্যা করল। ঘৃণিত মহিলাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন। এরা তিন ভাই বোন। বর্ষা ও মালিহা ক্যামব্রিজ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। মালিহা প্লে গোলাপ শাখার শিক্ষার্থী ও বর্ষা দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী । ভাগ্যক্রমে বর্ষা বেঁচে আছে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, ওই ভবনের আশপাশে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এসব ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগে-পরে তাদের ভাড়া বাসায় আলেয়া ছাড়া কেউ যাতায়াত করেননি। ঘটনার পর তিনি পাশের বাড়ি থেকে দুই দেবরকে ডেকে আনেন। তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় সন্ধ্যায় পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই সময় আলেয়ার হাতে কাটা দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। এক পর্যায়ে মধ্যরাতে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় আব্দুল বাতেন মামলা করেছেন।
আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর একটু সমস্যা আছে। সে কাউ কাউ (ঝামেলা) পছন্দ করত না। ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। সে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছিল। মানসিক সমস্যা আছে কিনা, এ বিষয়ে ডাক্তার কিছু বলতে পারেনি।’
জানা গেছে, আব্দুল বাতেনের তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ছিল নানাবাড়িতে। শুক্রবার দুপুরে বাসায় থাকা শিশুদের বাবা, মা ও দাদি একসঙ্গে খাবার খান। এর পর আলেয়া একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। দাদি ওপর তলার ফ্ল্যাটে বেড়াতে যান এবং বাবা তাদের ঘরে রেখে বাইরে যান। কিছু সময় পর আলেয়ার চিৎকারে তাদের দাদি ওপর তলা থেকে নেমে আসেন। রক্তাক্ত দুই শিশুকে দেখে তিনি বাতেনকে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীর মনে এ হত্যা কান্ডের সন্দেহের জট এখনো রয়েই গেছে, অনেকে বলছেন, সালেহা বেগম আসলেই কি মাইগ্রেনের সমস্যাজনিত কারণে নিজ হাতে গলা কেটে তার দুই সন্তানকে হত্যা করলো! না পরকিয়া বা অন্য কিছু?

Print Friendly, PDF & Email

Explore More Districts