
স্টাফ রিপোর্টার : জামালপুর শহরের পূর্ব ফুলবাড়িয়া এলাকার রোকসানা ইয়াসমিন দীপার মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পূর্ব ফুলবাড়িয়া শাহপুর এলাকার মৃত গিয়াস উদ্দিন ডাব্বু মিয়ার ছেলে মো. আশরাফুল আলম আনোয়ার। জামালপুর শহরের নতুন বাইপাস রোডে তাদের নিজস্ব স্থাপনায় গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তার সহোদর ভাই শামসুল আলম সাজু ও নাহিদুল আলম রাজু, জেষ্ঠাত্য ভাই সানাউল হক সাঈদ, ভগ্নিপতি তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. আশরাফুল আলম আনোয়ার, পিতা-মৃত গিয়াস উদ্দিন (ডাবলু মিয়া), গ্রাম-সাহাপুর, থানা ও জেলা: জামালপুর। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, জামালপুর শহরের সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজের পূর্ব পার্শ্বে প্রধান সড়ক সংলগ্ন সিংহজানী মৌজার আরওআর দাগ-৭৩০০, আরওআর খতিয়ান-৮৫৫, জে,এল ২৭৫, বিআরএস দাগ-১৪০৭৭, বিআরএস খতিয়ান-৫১৩৫, সংশোধিত খতিয়ান নং-২৮৭০৪, নামজারী মামলা নং-১৬০৭ (ওঢ-১)/২৩২৪) জমির পরিমান ৬.২৮ শতাংশ। যাহার দলিল নং-৩১১৫, দলিল সম্পাদনের তারিখ ০৩/০৬/১৯৬৩ইং এর মালিক মামলার বাদী আমার পিতা মৃত গিয়াস উদ্দিন। আমার পিতা উক্ত দলিল মূলে সেটেলম্যান্ট অফিসে ৯/০৮/১৯৮৪ইং তারিখে ৩০ ধারা মামলা দায়ের করেন। যাহার নং-৫৫৯। ওই মামলার বিবাদী পক্ষ হয় বাংলাদেশ সরকার পক্ষে জামালপুর ডেপুটি কমিশনার। এই মামলাটির রায় হয় ২৫/০৮/১৯৮৪ইং তারিখে।
যার ফলশ্র“তিতে আমার পিতা চূড়ান্তভাবে বিআরএস রেকর্ড প্রাপ্ত হন। যার বিআরএস দাগ নং-১৪০৭৭, খতিয়ান নং-৫১৩৫ জে এল নং-৫। জমি পরিমান ৬.২৮ শতাংশ। আমার পিতা উক্ত বিআরএস দাগ খতিয়ানভুক্ত জমির মালিক হয়ে ২০১৭ ইং সাল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করেন। অতপর ২০১৯ইং সালের ৯ ফেব্র“য়ারী আমার পিতা মারা যান। পরবর্তীতে আমিসহ আমার ২ ভাই, ৪ বোন ও মা ওয়ারিশপ্রাপ্ত হই। বর্তমান হালসন নাগাদ খাজনাদি পরিশোধ করা আছে।
পরবর্তীতে জামালপুর শহরের রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হলে সেখানে আমি এবং আমার ওয়ারিশদের ১.২২ একর ভূমি অধিগ্রহণের আওতায় আসে। জামালপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ১/০৩/২০২২ইং তারিখে ৪ ধারা নোটিশ দেন। পরবর্তীতে ১/০৬/২০২২ইং তারিখে ৭ ধারা নোটিশ দেন। এরপর ১৬/০৪/২০২৩ইং তারিখে ৮ এর (৩) (ক) ধায়ায় ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণের চূড়ান্ত নোটিশ দেয়।
উক্ত একই নোটিশে আমার ১.২২ শতাংশ এবং প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন গং এর ১.২২ শতাংশ ভূমির ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ২,১০,৩৯,২৮৪.৪৫ টাকা গ্রহণের জন্য বলা হয়। ওই নোটিশ মূলে উভয় পক্ষ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় বিল দাখিল করি। ওই সময়কার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আমলের জামালপুর সদর আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদের ব্যক্তিগত সহকারী আওয়ামী লীগের দোসর মিজানুর রহমান মিজান প্রভাব খাটিয়ে আমাদেরকে ভূমি অধিগ্রহণ অফিসে শুনানির নামে দীর্ঘ তিন বছর হয়রানি করেন। পরবর্তীতে হয়রানির শিকার হয়ে জেলা জজ আদালতে জেলা প্রশাসক, এডিসি রেভিনিউ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দেলোয়ার হোসেন গংদের বিবাদী করে আরপিটিশন মামলা দায়ের করি। ওই মামলাটি আদালত খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ জামালপুর জেলা জজ আদালতে আপিল করি। যার মামলা নং-০১/২০২৫ইং। ওই মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর বর্তমান এলএও পুনরায় উভয় পক্ষকে একাধিক নোটিশ দিয়ে তার অফিসে শুনানির জন্য হাজির করেন। উভয়ের কাগজপত্র বিশ্লেষণ করেন এবং টাকা উত্তোলনের পরামর্শ দেন। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন গং এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করেন। পরবর্তীতে এলএও শাখা থেকে পুনরায় বিরোধপূর্ণ এই ভূমি মাপ-ঝোক করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমাদের উভয় পক্ষকে শুনানির জন্য ৭/০৭/২০২৫ ইং তারিখে বিকেল ৪ ঘটিকার সময় তার কার্যালয়ে থাকার জন্য নির্দেশ দেন। ওইদিন উভয় পক্ষ হাজির হলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমাদের কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তিনি আজ পর্যন্ত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন এলএও অফিসে দাখিল করেননি।
উল্লেখ্য যে, গত ৩০/০৮/২০২৫ইং তারিখে জামালপুর প্রেসক্লাবে রোকসানা ইয়াসমিন দীপা নামের যে নারী আমি এবং আমার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি আমাদেরকে হয়রানিকারী মিজানুর রহমান মিজানের স্ত্রী।
মিজানুর রহমান্য মিজানের স্ত্রী রোকসানা ইয়াসমিন দীপা সাংবাদিকদের কাছে আমাদের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার চাঁদাবাজীর যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এর আগে ৩০/০৭/২০২৫ ইং তারিখে রোকসানা ইয়াসমিন দীপা আমার এবং আমার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে জামালপুরের জেলা প্রশাসক, জামালপুর র্যাব ক্যাম্প অফিস, পুলিশ সুপার, আর্মি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন দপ্তরে একইভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে আমাদেরকে নতুন করে হয়রানি শুরু করেছেন। কিন্তু সেই অভিযোগটিও ছিল ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
প্রকৃত বাস্তবতা হলো- বিগত ১৬/০৭/২০২৫ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে জামালপুর সদর ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার বিরোধপূর্ণ ভূমিতে তদন্তে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদায় সেদিন সেখানে আসার আগেই আমিসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংবাদিকবৃন্দ সেখানে উপস্থিত হই। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করি। কিন্তু সহকারী কমিশনার ও তার অফিসের কর্মচারীরা সেখানে আসেননি।
এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দুই পক্ষকে নিয়ে আপস মীমাংসার জন্য সালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত দেন। তিনদিন পর ১৯/০৭/২০২৫ ইং তারিখে জিগাতলা শাহীন স্কুল ভবনের নিচতলায় স্থানীয় গণ্যমান্য বক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বসে। ওই বৈঠকের শুরুতেই এই সালিসের সিদ্ধান্ত উভয়পক্ষ মানবে কিনা জানতে চাওয়া হয়। তখন দেলোয়ার। হোসেন, তার ছেলে ফয়সাল, তাদের কাছ থেকে জমিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী রোকসানা ইয়াসমিন দীপা তারা তা না মানার কথা বলে বৈঠক থেকে চলে যান। তিনদিন পরে জানিয়ে দেন যে তারা সালিশ বৈঠকের বিচার মানবেন না। তারা আইনি আশ্রয় নিবেন। এর আগেও একাধিকবার সালিশ দরবার হয়। কিন্তু প্রতিবারই তারা সালিশে না মেনে পুলিশ ও র্যাব অফিসে ফোন করে আমাদেরকে হয়রানি করেন এবং আমাদের দেখে নিবে বলে হুমকি দেন।
জামালপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ফেসবুকে পোস্ট করা যে ভিডিও ফুটেজের কথা বলেছেন রোকসানা ইয়াসমিন দীপা, সেই ভিডিওতে আমরা চাঁদাদাবি করেছি এমন কোন প্রমাণ নেই। ওই ভিডিও ফুটেজে আমার ছোটভাই সরকারি চাকরিজীবী শামসুল আলম সাজুকে আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে ফেসবুক আইডিতে পোস্ট অপপ্রচার চালায়।
প্রিয় সাংবাদিকভাইয়েরা, কে এই মিজানুর রহমান মিজান, তা আপনারা সবাই জানেন। এই মিজানুর রহমান মিজান সেনা সদস্যের চাকরি ছেড়ে জামালপুর শহরে মোবাইল মেকারের ব্যবসায় জড়িত হন। তিনি বিগত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের একজন সুপরিচিত দোসর ছিলেন। বিগত সরকারের আমলে জামালপুর সদর আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আবুল কালাম আজাদের ব্যক্তিগত গানম্যান কাম ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তার হলেও মিজানুর রহমান মিজান বেশ দাপটের সাথে প্রকাশ্যে জামালপুর শহরেই অবস্থান করছিলেন।
অবশেষে ১৮/০৮/২০২৫ ইং তারিখ সন্ধ্যায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানে গ্রেপ্তার হন তিনি। নাশকতার অভিযোগে মামলার আসামি হিসাবে বর্তমানে তিনি জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের পরপরই আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ভুয়া অভিযোগ তোলা ওই ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট দেন তার পরিবারের সদস্যরা। শুধু ফেসবুকেই নয়, সামাজিকভাবেও আমাদের অতীতে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। এখনও তাদের নানান অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তির ভূমির মালিকানা দাবির বিস্তারিত তথ্য এবং আমাদের বিরুদ্ধে রোকসানা ইয়াসমিন দীপা ও তার স্বামী মিজানুর রহমান মিজানের বিভিন্নভাবে অপপ্রচার ও হয়রানির করার ঘটনাগুলো তুলে ধরলাম। রোকসানা। ইয়াসমিন দীপা আমাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশন করে আমার এবং আমার দুই ভাইয়ের সম্মান হানি করেছেন। আমি ওয়ারিশসূত্রে এই জমির মালিক হিসাবে সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনিভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি কামনা করে আসছি। এই বিরোধপূর্ণ ভূমি নিয়ে বর্তমানে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আমি এবং আমার দুই ভাই কেউই রোকসানা ইয়াসমিন দীপা ও তার পরিবারের সদস্যদের কোন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাইনি। সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুল আলম আনোয়ার এসব মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের কাছে প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বিরোধপূর্ণ ভূমির আরেকটি পক্ষ ফয়সাল আহমেদ ও সরোয়ার জাহান বিপুল বলেন, আশরাফুল আলম আনোয়ার ও তার দুই ভাই সামছুল আলম সাজু ও নাহিদুল আলম রাজু আমাদের কাছে কোন প্রকার চাঁদা দাবি করেননি। এছাড়া আমাদের হুমকিও দেননি। মিজানুর রহমান মিজানের স্ত্রী রোকসানা ইয়াসমিন দীপা আমাদের জড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে যদি কিছু বলে থাকে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেও জানান তিনি।