সংবিধানসহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে ন্যূনতম ঐক্য বা সমঝোতায় পৌঁছাতে রাজনৈতিক দল, গনঅভ্যূত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সমঝোতা পরিষদ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সমঝোতা ব্যতীত সংবিধান সংস্কার কি সম্ভব?’- শীর্ষক সমঝোতা সংলাপে এ আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
সভায় লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তের একটা বড় রাজনৈতিক প্রশ্ন হচ্ছে এই সমঝোতা করবে কারা? একটা পক্ষ হতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে সেই সুপারিশ থেকে ন্যূনতম ঐক্য বের করে আনা সরকারের জন্য দুষ্কর হয়ে উঠবে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর সংবিধানের সংস্কার বিষয়ে মৌলিক মত পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য মেটাতে প্রয়োজন হবে দলগুলোর মধ্যে মুখোমুখি আলোচনা এবং সমঝোতা।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এই অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশনের দেয়া সুপারিশকে বৈধতা দেবার এখতিয়ার রাখে না। তাদের দায়িত্ব হতে পারতো রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নিয়ে একটা জাতীয় সমঝোতা পরিষদ গড়ে তোলা। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু চায় যে দেশ প্রয়োজনীয় সংস্কার বিধিবদ্ধ করে দ্রুত একটা নির্বাচনী গণতন্ত্রে ফিরে যেতে, তারাও তাদের স্বার্থেই এই সমঝোতা পরিষদ গড়ে তোলার ডাক দিতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই সভার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের কাছে এই সমঝোতা পরিষদ গড়ে তোলার আহ্বান রাখছে। একই সাথে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঐক্য কমিশনকে এই পরিষদে যুক্ত হবার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা মনে করি সরকারের ঐক্য পরিষদ এই সমঝোতা পরিষদের সেক্রেটারিয়েটের ভূমিকায় ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
সংলাপে এনডিএমের মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, নির্বাচন ছাড়া বর্তমান সংকট উত্তরণ সম্ভব না এবং যে সব সংস্কার প্রয়োজন সেগুলোও সম্ভব না। ন্যূনতম সমঝোতা, ঐক্য, আপোষের জন্য আমরা সবাই একমত।
আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, যার ক্ষমতা আছে, বড় তারা সমঝোতা চাইবে কেন? আমরা যারা ছোট দল, আমরাই মূলত সমঝোতা চাই। সমঝোতা কার সঙ্গে? শেখ হাসিনার সঙ্গে সমঝোতা সম্ভব হয় নাই। তিনি নাকি ২২ ঘণ্টা ফোনে কথা বলেন। তার মানসিক চিকিৎসা দরকার।
গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, সমঝোতা বাস্তবায়ন করতে হলে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা লাগবে। সামনের নির্বাচনটা শুধু একটি সাধারণ সংসদ নির্বাচন নয়, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির নির্বাচন। আমরা যদি এটা করতে পারি তাহলে, সারা বিশ্ব আমাদের মনে রাখবে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু দূরত্ব, ঐক্যে ফাটল দেখা যাচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। এই দূরত্ব আরও বাড়তে থাকলে তারা কোন না কোন রূপে অবশ্যই ফিরে আসবে। জাতীয় স্বার্থ, গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের একটা পরিসর এবং পদ্ধতি নিয়ে এক ধরনের চিন্তা দানা বেঁধেছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জুলাই ৩৬ ফোরাম অপরাজেয় বাংলার আহ্বায়ক এম এ এন শাহীন প্রমুখ।