জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব নেই : রসিক মেয়র

জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব নেই : রসিক মেয়র

জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব নেই : রসিক মেয়র

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর:
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, জোট-মহাজোটের খেলায় এখন জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব থাকবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। এই পার্টির নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব নেই। আমাদের দলের সংসদ সদস্য মনোনীত করার সিদ্ধান্তও আমরা ঠিকমতো নিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, রংপুর-৩ আসনের বর্তমান এমপি (রাহগির আল-মাহি সাদ এরশাদ) কিন্তু দলের প্রেসিডিয়ামদের সিদ্ধান্তে মনোনীত হননি। তার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। যার কারণে আমাদের রংপুরবাসীর যে প্রত্যাশা, যাকে মনোনয়ন দিলে রংপুরের মানুষের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যেত, সেই দিকটা তুলে ধরতে পারিনি।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাতে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ‘জনতার দরবার’ শিরোনামে সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যারা বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হন তারা মানুষের মূল্যায়ন করতে জানেন না। যদি রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির পরামর্শ থেকে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত আসতো তাহলে অবশ্যই সেই এমপি রংপুরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সংসদে কথা বলতো। রংপুরের মানুষের দাবি-দাওয়াগুলো তুলে ধরতে পারতো। কিন্তু আমরা সেটা দেখি না।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে যাবে কিনা, এর জবাবে দলের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জোট-মহাজোট করে জাতীয় পার্টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আমরা চাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি নিয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে। দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আমরা সবাই একমত আছি। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি অবস্থা দেখে জনগণ শঙ্কিত। দুইদলের এক মেরুতে এসে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটা নির্বাচনী সরকার গঠন করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করার পরিস্থিতি দেশে নেই।

শঙ্কা প্রকাশ করে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এখন সংঘাতের আশঙ্কা থেকে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেড়ে চলেছে। জাতীয় পার্টির প্রত্যাশা হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে বোঝা যায়, দেশে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। এখন আওয়ামী লীগের লোকেরাও ভোট দিতে যায় না। ঢাকা-১৭ আসনে ভোট পড়েছে ১১ শতাংশ অথচ সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজন রয়েছে ৪০-৬০ শতাংশ। এর মানে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের লোকজনও ভোট দিতে যায়নি।

যানজটে আটকা পড়ে নাকি অন্য কারণে অনুষ্ঠানে পৌঁছতে দেরি হয়েছে- এ প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, রংপুর শহর একটি প্রাচীনতম শহর। এখানকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট সংকীর্ণ। পৌরসভা বিলুপ্ত করে রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা কবার পর ৬৫ ফিট রাস্তা করতে দু’পাশের অবকাঠামো সরানো হয়েছে। সম্প্রসারিত সড়কের জন্য প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু সেইসময় কিছু দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিটির প্রথম মেয়র প্রয়াত সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু সঠিকভাবে কাজ করতে পারেননি। কোথাও ৪৮ ফিট, কোথাও ৫২ আবার ৫০ ফিট রাস্তা করেছেন। একটা লিঙ্ক রোড ধরেই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। এখন পর্যন্ত আমরা বাইপাস রাস্তা তৈরি করতে পারিনি। এখানে আমাদের ব্যর্থতাও আছে।

তিনি আরও বলেন, রংপুর সিটি কর্পোরশেন এলাকায় একটি শিল্পকলকারখানাও নেই। আমাদের এখানকার বেকার মানুষগুলোর বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। আমরা জনপ্রতিনিধি জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করি। আমরা জনগণের বিপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত যাক সেটা চাই না। আমরা চাই সেসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, থ্রি-হুইলারসহ অন্যান্য যানবাহনের নিবন্ধন রয়েছে, সেগুলোর যদি চলাচলের ব্যবস্থা করে অনিবন্ধিত যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতাম তাহলে সমস্যা সৃষ্টি হতো না। অনিবন্ধিত যানবাহনের কারণে সিটি কর্পোরশেন এলাকায় যানজট লেগেই থাকে।

ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য রাশেক রহমান, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর মহানগরের সেক্রেটারী আমিরুজ্জামান পিয়াল অংশ নেন।
অনুষ্ঠান চলাকালে রংপুরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা চার দলের প্রতিনিধিদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। এ সবের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা।

 

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন

Explore More Districts