জনপ্রিয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ ইফফাত শরীফ শুভকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে একটি হাইয়েস মাইক্রো বাস। ঘটনার সময় গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে সেই চালকের বিস্তারিত নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে এই ব্যাপারে সাংবাদিক ইফফাত রমনা থানা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় পেশাগত দায়িত্ব পালনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সময় রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির সামনের মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ইফফাত শরীফ শুভ বাঁ পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন এবং তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মোহাম্মদ ইফফাত শরীফ শুভ জানান, সকালে আওয়ামী লীগের গ্রেফতারকৃত মন্ত্রীদের প্রথম বিচারকার্যের সংবাদ সংগ্রহে বনশ্রীর বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন তিনি। সকাল সাড়ে ৯টায় সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) সামনের মোড়ে এলে সেখানে তীব্র যানজট দেখতে পান তিনি। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একটু ফাঁক পেলে তিনি দুইটি গাড়ির মাঝখান দিয়ে পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন ঢাকা মেট্রো চ: ৫৬-০১৯৫ নম্বরের একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস তার মোটরসাইকেলকে পাশ থেকে ধাক্কা দেয় এবং মোটরসাইকেলের সামনের অংশে কিছুটা চাপা দিয়ে স্থির হয়ে থাকে। তখন ঘটনাটিকে নিছকই দুর্ঘটনা মনে করে ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইফফাত মাইক্রোবাস চালককে তার গাড়িটি পেছনে নিতে বলেন। কিন্তু চালক তার গাড়িটি পেছনে না নিয়ে উল্টো ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়েছে বলে জানায়৷
এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে গাড়ির চালককে বকাবকি করলে তিনি সেটি পেছনে নেন। তখন ভুক্তভোগী সাংবাদিকের সঙ্গে কিছুটা বাকবিতন্ডা হয় ওই গাড়িচালকের। সে সময় ওই গাড়িচালক ফোনে কয়েকজনকে ডাক দেয়। এক পর্যায়ে ভুক্তভুগী ইফফাত পেশাগত দায়িত্বপালনে দেরি হওয়ায় সেখান থেকে চলে যেতে মোটরসাইকেলে উঠলে ওই চালক আবার তাকে দুই-তিনবার ধাক্কা দেয় এবং চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন ইফফাত শরীফ গাড়ির ধাক্কায় পায়ে ব্যাথা পান এবং তার মোটরসাইকেলের সামনে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ওই চালক গাড়িসহ অন্য রাস্তায় দ্রুত পালিয়ে যান।
ইফফাত শরীফের ধারণা করেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সেই চালক তাকে চাপা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে। এই দুর্ঘটনায় তিনি সামান্য আহত হলেও বিষয়টি নিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, প্রথমবার ধাক্কা দেওয়ার পর আমি এটাকে দুর্ঘটনাই মনে করেছিলাম। সেই গাড়ির ধাক্কায় আমি মোটরসাইকেলসহ পড়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমি গাড়িটি পেছনে নিতে চালককে অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি গাড়ি পেছনে না নিয়ে আমাকে বলে, ‘তুই ঢুকছস ক্যান?’ এরপর আশপাশের মানুষ এগিয়ে এলে তিনি গাড়ি পেছনে নিতে বাধ্য হন। এমন কাজ কেনো করেছে এটা ওই চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি উল্টো আমাকে বকাবাকি করেন৷ পরে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে আমার রিপোর্টের কাজে চলে যেতে চাইলে সেই গাড়িচালক আবারো কয়েকবার আমাকে ধাক্কা দেয়। এই কারণে এখন মনে হচ্ছে সে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইফফাত শরীফ শুভ রমনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে ওই গাড়ি চালকের নাম-পরিচয় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ইফফাত শরীফ শুভ বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে এক চা বিক্রেতা বলেছে ওই চালকের নাম দেলু। তিনি পাশেরই একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের (১২তলা ভবন) গাড়ির চালক। তবে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ওই চা বিক্রেতা বলতে পারেননি।
এই বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুকের কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। গোলাম ফারুক বলেন, আমরা বিআরটিএ এর মাধ্যমে গাড়ির মালিকানা যাচাই করে চালককে ধরবো। প্রয়োজনে ওই চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।