প্রচন্ড গরমে রসাল লিচুর প্রতি আকর্ষণ যেন একটু বেশি। চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমের রসালো ফল লিচুর জমজমাট কেনাবেচা। প্রথম বাজারে আসায় দেশি লিচুর পাশাপাশি পাবনা ঈশ^রদীর লিচুর দাম বেশ চড়া।
সোমবার উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ছেংগারচর বাজার এলাকায় দেশি লিচু বিক্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদির বেলালী লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়। ক্রেতারাও পছন্দের লিচু কিনতে ভীড় জমাচ্ছেন। পৌর বাজারের মোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও পছন্দের লিচু কিনতে ভীড় জমাচ্ছেন।
অগ্রিম বাজারে আসায় কোনো কোনো ক্রেতা কিনলেও কিছুটা টক ও দাম বেশি হওয়ার কারণে কম বিক্রি হচ্ছে। তবে পাবনার ইশ্বরদী এলাকার লিচু একটু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় তা বিক্রি বেশ ভালো।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর বাজারে সুস্বাদু ও দেশব্যাপী খ্যাত দিনাজপুরের লিচুর জমজমাট বাজার জমে উঠেছে। আর বাজার বসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার ছেংগারচর বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজার। রসালো ও সুস্বাদু এই লিচু আকৃষ্ট করেছে ভোক্তাদের। তবে এ বছর লিচুর দাম নিয়ে কৃষক-ব্যবসায়ীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দামে বেশি হলেও ক্রেতারা তাদের পরিবারের চাহিদা পুরন করতে ক্রয় করছেন। কেউ কেউ আবার প্রিয়জনের জন্য লিচু কিনে বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সপ্তাহখানেক ধরে ছেংগারচর বাজারে দিনাজপুরের বোম্বাই,মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু উঠতে শুরু করেছে। বাজারে লাল রঙেরর থোকা থোকা লিচু নজর কাড়ছে সবার। দিনাজপুরের রসালো এ লিচুর খ্যাতি রয়েছে সারা দেশজুড়েই।
তবে সুমিষ্ট স্বাদের বোম্বাই, চায়না থ্র্রি, কাঁঠালি ও হাড়িয়া জাতের লিচু কিছু কিছু আসতে শুরু করলেও পুরোদমে এখনো তেমন বাজারে আসতে শুরু করেনি। তবে ইতিমধ্যে উপজেলার সবচেয়ে পুরনো ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর বাজারে জমে উঠেছে লিচু বেচা-কেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে বাজারের ফলপট্রি ও বিভিন্ন অলি-গলি।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে বর্তমানে চায়না-৩, মাদ্রাজি, বেদানা ও বোম্বাই ও কাঁঠালি জাতের লিচু বেচাকেনা চলছে। লিচুর জাতভেদে ১’শ টি করে লিচু বিক্রি হচ্ছে মাদ্রাজি ৩৫০ টাকা, বোম্বাই ৪০০ টাকা, কাঁঠালি ৫০০ টাকা, চায়না-৩ আট শত টাকা।
উপজেলায় এখন লিচুর মৌসুম। চারপাশ জুড়ে লিচুর ঘ্রাণ আর বাজারজুড়ে চলছে জমজমাট কেনাবেচা। কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে উপজেলার হাট-বাজার। প্রতিদিনই স্থানীয় ও আশপাশের এলাকা থেকে লিচু কিনতে আসছেন শত শত মানুষ।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাগানগুলোতে গাছে গাছে ঝুলছে টসটসে রসালো লিচু। লিচু চাষিরা বলছেন, এবার ফলন যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি দামও পাচ্ছেন সন্তোষজনক। প্রতিটি গাছে গড়ে ২০-৩০ কেজি পর্যন্ত লিচু পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলার পাঁচআনী এলাকার কৃষক মোঃ গোলাম কাদির মিয়া জানান, “এ বছর লিচুর গাছে প্রচুর ফল এসেছে। বাজারে চাহিদাও অনেক। প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ২০০০থেকে ২৫০০ টাকায়।” তিনি আরও বলেন, “পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় এবার দাম ভালো পাওয়ায় আমরা বেশ খুশি।”
ছেংগারচর বাজার মজিব সরকারের চা দোকানের সামনে লিচু ব্যবসায়ী মোঃ সাজ্জাদ জানান সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। লিচুর মান ভালো হওয়ায় বিক্রিও ভালো হচ্ছে। তিনি পাবনা ঈশ^রদির বেলালী লিচু বিক্রি করছেন প্রতি শ’ লিচু ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়। তার কিনা ৩২০ টাকা ৩৩০ টাকায়। দৈনিক তিনি ৬-৭ হাজার লিচু বিক্রি করছেন।
ছেংগারচর পৌরসভার আদুরভিটি এলাকা থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তফা জানান, এবার রংপুর, নওগাঁ, পাবনা, নাটোরেও লিচু আবাদ হয়েছে। যার ফলে এবার দাম কিছুটা কম। তবে তিনি জানান, সব জায়গার চেয়ে দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা অনেক বেশি। দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সবখানেই বেশি। লাভ কম হলেও ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য দিনাজপুরের লিচুর ব্যবসা করেন তিনি।
লিচু কিনতে আসা উপজেলার ৯নং দক্ষিণ ব্যাসদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার জানান, বাজারে এই প্রথম লিচু এসেছে তাই ছেলেদের জন্য লিচু কিনতে এসেছেন তিনি। দাম মোটামুটি একটু বিশিই মনে হচ্ছে। বছরের মৌসুমি ফল খেতেই হবে তাই দাম যাই হোকনা লিচু কিনতেই হবে। ১০০টি কিনলাম ৪০০ টাকায়। দাম কমায়নি বিক্রেতা। টক না মিষ্টি তা খেয়ে দেখা হয়নি।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, দিনাজপুর ও রাজশাহীর মতো “লিচু মতলব একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি যাতে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে ভালো ফলন পায়। এবার লিচুর উৎপাদন ও বাজারমূল্য দুই-ই সন্তোষজনক।”
এভাবে মতলবে লিচুর মৌসুমে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এবারের ফলন ও বাজারদর। লিচু প্রেমীদের জন্য উপজেলা যেন এখন এক স্বাদ ও ঘ্রাণে ভরা প্রাকৃতিক উপহার।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১৯ মে ২০২৫