জনমনে আতঙ্কের নাম ‘এসআই খলিল’

জনমনে আতঙ্কের নাম ‘এসআই খলিল’

সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক মো: খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে তার নিজ বিট এলাকার মানুষসহ অন্যান্য সাধারণ জনগণকে মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না তারা।

জনমনে আতঙ্কের নাম ‘এসআই খলিল’

সম্প্রতি মানিকগঞ্জ সদর থানার একটি মারামারির মামলায় আসামীদের গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের খবর পাওয়া যায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত ১ জুলাই দিবাগত রাত ১০টার দিকে এক সোর্সকে সঙ্গে নিয়ে আসামীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন উপ-পরিদর্শক মো: খলিলুর রহমান। এর কয়েকদিন পরে চার্জশীটে আসামীদের অপরাধের ধারা কমিয়ে দেয়ার প্রলোভনে ফের টাকা দাবি করেন এসআই খলিলুর রহমান।

এ ঘটনার পর এসআই খলিলুর রহমানের বিট এলাকা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে গিয়ে তার অনিয়ম-দুর্নীতির খোঁজখবর নিতে গেলে বেরিয়ে আসে একর পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদকের কাছে বলতে থাকেন এসআই খলিলুর রহমানের নানা অপকর্মের কাহিনী।

রাজিবপুর এলাকার মনজুর আলম বলেন, এসআই খলিল তার সাথে আলম হোসেন ও মাসুদ রানা পবন নামের দুই সোর্স নিয়ে এসে এলাকায় অনেক মানুষকে হয়রানি করে। আমার ছেলে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সে এখন হ্যালোবাইক চালায়। রোজার ঈদের আগে এসআই খলিল আমার ছেলে নাঈমকে রাস্তা থেকে আটক করে আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে নিয়ে যায়। এসআই খলিল গাড়িসহ আমার ছেলেকে থানায় চালান করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে এ ঘটনাটি আমি চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানালে তিনি এসআই খলিলকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার পরামর্শ দেন। চেয়ারম্যানকে ফোন করে ঘটনাটি জানানোর কারণে এসআই খলিল আরো ক্ষেপে যান। এরপর টাকা নিয়ে দর কষাকষির একপর্যায়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন খলিলুর রহমান। এরপর আমি ১৫ হাজার টাকা দিব বলে স্বীকার করি। এরপর এসআই খলিল রাজিবপুর বাজারের মসজিদে পাশে গিয়ে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয় এবং বাকি পাঁচ হাজার টাকার জন্য আমারই মোটরসাইকেলে করে আমার বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে টাকা নিয়ে আসে।

মনজুর আলম আরো জানান, এসআই খলিল কিছুদিন আগে মারুফ নামের একটা ছেলেকে এক স্টিকসহ (গাজা) আটক করেছিল। তার সাথে আরো তিনজন ছেলে ছিল। খবর পেয়ে সেখানে এগিয়ে যাই আমি। পরে এসআই খলিল বলেন, ১০ হাজার টাকা দিলে মারুফকে ছেড়ে দিব। পরে আমি জানাই মারুফের বাবা নাই, তার মা গার্মেন্টসে চাকরি করে। খুবই গরিব মানুষ। ৫ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। পরে আমাদের কথায় রাজি না হয়ে মারুফকে থানায় নিয়ে যায় এবং আধা কেজি গাজার মামলা দেয়। আর তার সাথে যে তিনজন ছিল তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়।

সফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন জানান, কিছুদিন আগে সাগর নামে আমার এক ভাগ্নেসহ দুইজনের কাছে গাজা আছে দাবি করে আটক করেন এসআই খলিল। এরপর প্রায় ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ছোট বারাহিরচর কবরস্থানের পাশ থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেয় এসআই খলিল। সাগরসহ ওই দুইজন জানায় তাদের কাছে কোন গাজা ছিলনা। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদেরকে আটক করেছিল খলিল দারোগা।

কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার আক্কাস আলী নামের আরেক ব্যক্তি জানান, একটি মামলা রুজু করার জন্য ৩৫ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই খলিল। টাকা দেয়ার পরও সেই মামলা রুজু করেনি তিনি।

করম আলী নামের আরেকজন জানান, আমার ভাগ্নে মানোয়ারের সাথে তার এক প্রতিবেশির মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করার পর তদন্ত করতে আসেন এসআই খলিল। সে যখনই এসেছে তাকে কিছু কিছু টাকা দিতে হয়েছে। সর্বশেষ মামলা রুজু করে দিবে বলে ২১ হাজার টাকা নেন তিনি। টাকা নেয়ার পরও মামলা রুজু না করায় আমার টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলি। এরপর তিনি ১৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছি বিপক্ষ লোকজনের কাছ থেকে তিনি অনেক বেশি টাকা নিয়ে আমাদের মামলা রুজু করেননি।

কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো: মাসুদ হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহ আগে আমাদের এলাকার মান্নানের ছেলেকে ধরেছিল এসআই খলিলুর রহমান। মান্নানের ছেলের কাছে তিনটি গাজার স্টিক পাওয়া গিয়েছিল। তাকে পাঁচশ গ্রাম গাজার মামলা দিয়েছে। কিন্ত ওর সাথে আরো তিনটা ছেলে ছিল, তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে।

তিনি আরো জানান, কিছুদিন আগে রাফি ও উদয় নামের দুজনকে আটক করেছিল এসআই খলিলুর রহমান। রাফির কাছে একটা স্টিক পাওয়া গেলেও উদয়ের কাছে কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্ত টাকা না দেয়ায় উদয়ের বিরুদ্ধেও মাদক মামলা দিয়েছে এসআই খলিল। উদয় নামের ছেলেটা বিদেশ যাওয়ার প্রস্ততি নিয়েছিল। ওই মামলার কারণে সে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে পারেনি। ফলে তার আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। অপরদিকে রাফির কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাকেও ছাড়েনি খলিল।

যুবলীগের এই নেতা আরো জানান, এসআই খলিল এই কৃষ্ণপুরে এত পরিমাণ অপকর্ম করেছে যে সেটা বলে শেষ করা কঠিন। তাকে দেখলে মানুষ এখন আতঙ্কে থাকে। আগেও তো অনেক পুলিশ দেখেছি। কিন্ত তারা এরকম ছিলনা। পুলিশ জনগণের বন্ধু হলেও এসআই খলিল একজন মুর্তিমান আতঙ্কের নাম।

এসব বিষয়ে এসআই খলিলুর রহমানের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি। আপনি থানায় আসেন তারপর কথা বলবো।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: হাবিল হোসেন বলেন, কারো কোন অভিযোগ থাকলে আমরা সেটি খতিয়ে দেখবো।

Explore More Districts