তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘কেন তারা (বিএনপি) নির্বাচন করল না এ নিয়ে তারা এবং তাদের সমমনা দলগুলো এখন হতাশায় নিমজ্জিত। তাদের সাথে যদি ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করেন, তাহলে জানতে পারবেন তাদের মধ্যে কি পরিমাণ হতাশা বিরাজ করছে।’
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোটের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা, ভোট বর্জনের ডাকের পাশাপাশি ৫ জানুয়ারি ট্রেনে বর্বরোচিত হামলা এবং ৪, ৫, ৬ জানুয়ারি বিভিন্ন জায়গায় ভোট কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ভোট উৎসবের মধ্য দিয়ে সারাদেশের মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোট প্রদান করেছে, বিএনপিসহ যারা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল তাদেরকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।’
চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে টানা চতুর্থবার নির্বাচিত এমপি হাছান বলেন, ‘বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো এখন হতাশায় নিমজ্জিত- কেন তারা নির্বাচন করলো না। তাদের সাথে যদি ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করেন, তাহলে জানতে পারবেন তাদের মধ্যে কি পরিমাণ হতাশা বিরাজ করছে। তারা এখন অনুধাবন করতে পেরেছে, এই নির্বাচন বর্জন করে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত আছে।’
তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ সার্কভুক্ত দেশগুলো এবং ওআইসিভুক্ত দেশগুলোসহ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে যে, দেশে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সোমবার বিকেলে তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানিয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি পক্ষপাতদুষ্ট, অসম্পূর্ণ এবং একপেশে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘আমি বিবৃতিটি পড়েছি। বিবৃতিতে আগুনসন্ত্রাস করে, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পোড়ানোর ব্যাপারে কোনো কথা নাই। সেখানে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে, গ্রেফতারের কথা বলা হয়েছে, অথচ গ্রেফতার তো তাদেরই করা হচ্ছে যারা আগুনসন্ত্রাসের সাথে যুক্ত।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে সেখানে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের সাবেক চিফ অব স্টাফ, সাবেক কংগ্রেসম্যান, সিবিএস নিউজের চিফ নিউজ এডিটর এবং অন্যান্য দেশ তথা জার্মানি, ইইউ পার্লামেন্টের সাবেক মেম্বার সবাই ছিল। তারা সবাই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচনের প্রশংসা করেছে।’
আপনারা জানেন, ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং নির্বাচন সুন্দর হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমরা সবসময় দেখে এসেছি, চীন, রাশিয়া যা বলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উল্টোটা বলে। ভারত, চীন, রাশিয়া একযোগে যখন বলেছে, আমাদের নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে, তারা যদি এই অভিনন্দনটা ইতোমধ্যেই না দিতো বা এই অভিমত ব্যক্ত না করতো তাহলে হয়ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিটা অন্য রকম হতো বলে আমার ধারণা।’
একইসাথে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে এবং বিশ্ব অঙ্গনেও আমরা এক সাথে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সাথে সম্পর্ক আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তারা আমাদের সাথে কাজ করবে সেটি এই বিবৃতিতেও বলেছে।’
এ দিন দেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, উৎসবমুখর পরিবেশে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো কোনো জায়গায় ভোট প্রদানের হার ৭০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি, গড়ে ৪১.৮ অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ। আমার এলাকায় ৬৯.৪৩ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এর চেয়েও বেশি সম্ভবত ৮০ শতাংশ। শহরাঞ্চলে হারটা কিছুটা কম ছিল কারণ শহরের মানুষ জায়গা পরিবর্তন করে, আবার তিনদিন টানা ছুটি পাওয়ার কারণে যেহেতু অন্যরা গ্রামে ভোট দিতে যাচ্ছে, তাদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করার জন্য অনেকেই গ্রামে চলে গেছে।’